Monday, July 4, 2016
Wednesday, June 15, 2016
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬।
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামী ১০ জুলাই ২০১৬। দেশের সর্ববৃহৎ ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দলটির সম্মেলন কেবল দলটির জন্যই নয়, দেশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
বর্তমানে দলটি ক্ষমতায় থেকে দেশ, জাতি ও জনগণের উন্নতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রগতিবাদী ও তরুণ মুসলিম লীগ নেতাদের উদ্যোগে পূর্ব বাংলার গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিনিধিত্বকারী গণরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দলটির জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুদীর্ঘ প্রায় ৬৭ বছরের ইতিহাসে আমাদের জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমন কোনো সুকীর্তি ও অর্জন নেই, যাতে আওয়ামী লীগ দলটির নেতৃত্বের ভূমিকা ছিল না। জনগণের ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা ও কর্তব্যের রক্ষক, ধারক-বাহক এবং স্বার্থক রূপকার ও পরিচালক হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং এর আগে দুই নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানী আর পরে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ অগণিত কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, মেধা-শ্রম, রক্ত-ঘাম, স্বপ্ন-কর্মে দলটি আমাদের জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় নানা বাধা-বিপত্তি ও চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বর্তমান দিনগুলোতে দলটি বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় থেকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল উদার গণতান্ত্রিক ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিতান্ত অন্ধ ও হীন উদ্দেশ্যপূর্ণ ব্যক্তি গোষ্ঠী মহল ও দল ছাড়া দেশবাসী সকলেই স্বীকার করবেন যে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস হচ্ছে বাংলাদেশেরই ইতিহাস। উপমহাদেশ তো বটেই এবং এমন কি বিশ্বেও এমন ঐতিহ্যমণ্ডিত গণ-আস্থাসম্পন্ন ও সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দল বিরল; যে দল হত্যা-খুন, জেল-জুলুম, হামলা-মামলা, প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সামরিক আইনের বিধিনিষেধ, পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশে ব্যবহারীদের অপপ্রচার এবং দেশি-বিদেশি কায়েমি স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিহত করে জনগণের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সুদীর্ঘ এই সময়কালে প্রতিক্রিয়া ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করার সবৈব ও সর্বাত্মক হীন প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। কিন্তু বাংলার মাটি ও মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবেই টিকে আছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা এবং ৩ নভেম্বর তার সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর পরাজিত শক্তি অপপ্রচার-মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এটা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দশা হবে ঠিক পাকিস্তানের মুসলিম লীগের মতো। মুসলিম লীগের যেমন মৃত্যু ঘটেছিল, তেমনি আওয়ামী লীগেরও দিন শেষ হবে। বাংলাদেশকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বানাতে চেয়েছিল একাত্তরের পরাজিত জাতীয় শত্রুরা, তাই পাকিস্তান ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি ওরা। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, আজ জনগণের সমর্থন, আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণœ রেখে দেশপ্রেমের গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে ক্ষমতায় থেকে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দলটি দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই এই দলের সম্মেলনকে ঘিরে দেশবাসী বিপুলভাবে আলোড়িত হয়ে উঠছে।
দুই
বিগত ৬৭ বছরে দলটির ১৯টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দলটির সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়ার গঠনতান্ত্রিক বিধান ছিল। প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৫০ সালে মুদ্রিত গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা থেকে নির্বাচিত ১ হাজার ৪৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত গঠনতন্ত্রে দুই বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়। এখন গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়েছে। ইতিহাসের গভীরে গিয়ে প্রাণরস আহরণের জন্য ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-সদস্য-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও জনগণকে আজ স্মরণে আনতে হবে অতীতে কোন পরিবেশে কবে কোথায় কোন কর্তব্য সাধনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সম্মেলনগুলো জাতি ও জনগণের জীবনে কোন তাৎপর্য বয়ে এনেছে। এ বিষয়টি অনুধাবনের জন্য বিগত সময়ের ১৯টি কাউন্সিল ও ২টি বিশেষ কাউন্সিল তথা সম্মেলনের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো।
বিগত ৬৭ বছরে দলটির ১৯টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দলটির সম্মেলন প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হওয়ার গঠনতান্ত্রিক বিধান ছিল। প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৫০ সালে মুদ্রিত গঠনতন্ত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা থেকে নির্বাচিত ১ হাজার ৪৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত গঠনতন্ত্রে দুই বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়। এখন গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান চালু হয়েছে। ইতিহাসের গভীরে গিয়ে প্রাণরস আহরণের জন্য ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠানের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-সদস্য-কর্মী-সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী ও জনগণকে আজ স্মরণে আনতে হবে অতীতে কোন পরিবেশে কবে কোথায় কোন কর্তব্য সাধনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সম্মেলনগুলো জাতি ও জনগণের জীবনে কোন তাৎপর্য বয়ে এনেছে। এ বিষয়টি অনুধাবনের জন্য বিগত সময়ের ১৯টি কাউন্সিল ও ২টি বিশেষ কাউন্সিল তথা সম্মেলনের তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলো।
* প্রতিষ্ঠা সম্মেলন : ২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯; ঢাকা, রোজ গার্ডেন। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
* দ্বিতীয় সম্মেলন : ১৪-১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* তৃতীয় সম্মেলন : ২১-২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* চতুর্থ সম্মেলন : ৭-৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭; কাগমারি, টাঙ্গাইল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* বিশেষ সম্মেলন : ১৩-১৪ জুন, ১৯৫৭; ঢাকা, শাবিস্তান সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে সভাপতি পদত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ।
* পঞ্চম সম্মেলন : ৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* সপ্তম সম্মেলন : ১৯ আগস্ট, ১৯৬৭; ঢাকা, পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগ অফিস। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* অষ্টম সম্মেলন : ৪ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* নবম সম্মেলন : ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* দশম সম্মেলন : ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকা। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১১তম সম্মেলন : ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
* ১২তম সম্মেলন : ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
বিশেষ সম্মেলন : ২৩-২৪ নভেম্বর; ১৯৭৮; ঢাকা।
* ১৩তম সম্মেলন : ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
* ১৪তম সম্মেলন : ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
* ১৫তম সম্মেলন : ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১৬তম সম্মেলন : ৬-৭ মে, ১৯৯৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* বিশেষ কাউন্সিল : ২৩ জুন, ২০০০; ঢাকা।
* ১৭তম সম্মেলন : ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল।
* ১৮তম সম্মেলন : ২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
* ১৯তম সম্মেলন : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।*
(* বিভিন্ন পুস্তক ও দলিল অনুসরণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারিখ বা সম্মেলন কত দিনের হয়েছে প্রভৃতি নানাভাবে লেখা রয়েছে, ঢাকায় কোথায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে লেখকের জানার সীমাবদ্ধতার কারণে তা এখানে তুলে ধরা সম্ভব হয় নি। এই তালিকা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।)
* দ্বিতীয় সম্মেলন : ১৪-১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩; ঢাকা, মুকুল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* তৃতীয় সম্মেলন : ২১-২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫; ঢাকা, রূপমহল সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* চতুর্থ সম্মেলন : ৭-৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭; কাগমারি, টাঙ্গাইল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* বিশেষ সম্মেলন : ১৩-১৪ জুন, ১৯৫৭; ঢাকা, শাবিস্তান সিনেমা হল। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীতে সভাপতি পদত্যাগ করে ন্যাপ গঠন করলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ।
* পঞ্চম সম্মেলন : ৬-৮ মার্চ, ১৯৬৪; ঢাকা, ইডেন হোটেল। সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
* ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৮-২০ মার্চ, ১৯৬৬। ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* সপ্তম সম্মেলন : ১৯ আগস্ট, ১৯৬৭; ঢাকা, পুরানা পল্টন আওয়ামী লীগ অফিস। সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* অষ্টম সম্মেলন : ৪ জুন, ১৯৭০; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ।
* নবম সম্মেলন : ৭-৮ এপ্রিল, ১৯৭২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* দশম সম্মেলন : ১৮-২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪; ঢাকা। সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১১তম সম্মেলন : ৩-৪ এপ্রিল, ১৯৭৭; ঢাকা, ইডেন হোটেল। আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
* ১২তম সম্মেলন : ৩-৫ মার্চ, ১৯৭৮; ঢাকা, সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।
বিশেষ সম্মেলন : ২৩-২৪ নভেম্বর; ১৯৭৮; ঢাকা।
* ১৩তম সম্মেলন : ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১; ঢাকা, হোটেল ইডেন। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। সাধারণ সম্পাদক অন্য দল গঠন করে বহিষ্কৃত হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
* ১৪তম সম্মেলন : ১-৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
* ১৫তম সম্মেলন : ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* ১৬তম সম্মেলন : ৬-৭ মে, ১৯৯৭; ঢাকা, সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।
* বিশেষ কাউন্সিল : ২৩ জুন, ২০০০; ঢাকা।
* ১৭তম সম্মেলন : ২৬ ডিসেম্বর, ২০০২; ঢাকা। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল।
* ১৮তম সম্মেলন : ২৪ জুলাই ২০০৯; ঢাকা, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
* ১৯তম সম্মেলন : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২; ঢাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।*
(* বিভিন্ন পুস্তক ও দলিল অনুসরণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারিখ বা সম্মেলন কত দিনের হয়েছে প্রভৃতি নানাভাবে লেখা রয়েছে, ঢাকায় কোথায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সুনির্দিষ্ট করে লেখকের জানার সীমাবদ্ধতার কারণে তা এখানে তুলে ধরা সম্ভব হয় নি। এই তালিকা সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়। এ বিষয়ে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।)
উল্লিখিত তালিকা লক্ষ্য করলেই এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, দেশের ঐতিহ্যবাহী দলটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনেক সময়েই সময়মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত করতে পারে নি। এর কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে সামরিক শাসনে রাজনীতি বন্ধ থাকা, দমনপীড়ন, আন্দোলন- সংগ্রাম, হত্যা-ক্যুয়ের মাধ্যমে দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রচেষ্টা প্রভৃতি সব অনিবার্য কারণে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারে নি। তবে যখনই আওয়ামী লীগ সময় ও সুযোগ পেয়েছে, তখনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রয়োজনে বিশেষ কাউন্সিল করেছে। সম্মেলন যথাসময়ে করার বিষয়ে অন্য দলগুলোর তুলনায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে।
তিন
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনও এটা বিস্মৃত হয় নি যে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা, মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে যোগ্যতমদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রভৃতি করার জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠা সম্মেলন থেকে ১৯তম সম্মেলনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রতিটি সম্মেলনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সংগঠনের জন্য আর সেই সাথে দেশের জন্য অবদান রেখেছে। প্রতিটি সম্মেলনকেই মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা চলে। আর এমন একটি সম্মেলনও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দেশ ও জনগণের আর সেই সাথে দলের প্রয়োজনে সম্মেলন কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয় নি। জন্মলগ্নের অঙ্গীকার অনুযায়ী লক্ষ্যের প্রতি অবিচল ও স্থির থেকে কৌশলে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী ও নমনীয় থাকার ঐতিহ্য বরাবরই আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনও এটা বিস্মৃত হয় নি যে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা, মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, প্রবীণ-নবীন সমন্বয়ে যোগ্যতমদের নিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রভৃতি করার জন্য গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যথাসময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত করা অপরিহার্য। প্রতিষ্ঠা সম্মেলন থেকে ১৯তম সম্মেলনগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রতিটি সম্মেলনই আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও সংগঠনের জন্য আর সেই সাথে দেশের জন্য অবদান রেখেছে। প্রতিটি সম্মেলনকেই মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা চলে। আর এমন একটি সম্মেলনও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দেশ ও জনগণের আর সেই সাথে দলের প্রয়োজনে সম্মেলন কোনো পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয় নি। জন্মলগ্নের অঙ্গীকার অনুযায়ী লক্ষ্যের প্রতি অবিচল ও স্থির থেকে কৌশলে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী ও নমনীয় থাকার ঐতিহ্য বরাবরই আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছে।
দলটির সম্মেলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা বিশেষ মুহূর্তে প্রয়োগ করতে আওয়ামী লীগের সম্মেলন ভুল করে নি। এ কারণেই জনগণ যেমন দলটির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পেরেছে, তেমনি দলও কখনও জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারায় নি। এই পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসই আওয়ামী লীগের শক্তির প্রধানতম উৎস। জনগণের সাথে এই সংযোগ থাকার কারণেই দেখা যাবে যে, তৃণমূলে জনগণের নেতারাই হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সদস্য কর্মী ও নেতা। সম্মেলনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্ত কখনও তৃণমূলের সদস্য কর্মী ও নেতাদের চিন্তা-চেতনার বিপরীতধর্মী না হওয়ায় চরম দুর্দিনেও এরাই আওয়ামী লীগকে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শ্রম-মেধা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে।
সম্মেলনগুলো উল্লিখিত ভূমিকা রেখেছে বলেই প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সক্রিয় ও উজ্জীবিত থাকতে সক্ষম হয়েছে। উল্লিখিত কথাগুলো যে ইতিহাসের কষ্টিপাথরে সত্য এবং প্রতিটি সম্মেলন থেকে যে কিছু শেখার রয়েছে, তা বিবেচনার জন্য বিগত সম্মেলনগুলোর তাৎপর্য ও অর্জনের দিকে সংশ্লিষ্ট সবার ফিরে তাকাতে হবে। অর্জনের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই সংগ্রাম অব্যাহত রেখে নতুন নতুন অর্জন ছিনিয়ে আনতে হবে। নতুন তাৎপর্য অর্জনের জন্যই অতীতের তাৎপর্যকে করতে হবে মহিমান্বিত, নিতে হবে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা। বর্তমানের চলার পথকে কণ্টকমুক্ত ও আলোকিত করার জন্যই অতীতের দিকে ফিরে তাকানো ভিন্ন বিকল্প নেই।
চার
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২২ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, দিক-নির্দেশহারা। পাকিস্তানি শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, পূর্ব বাংলা-বিরোধী কার্যকলাপ, গণতন্ত্র ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে অনিহা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্ভিক্ষাবস্থা প্রভৃতি নতুন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নসাধকে ধূলিস্যাৎ করে চলছিল। কোনো বিরোধী কথা বললেই ‘শির কুচাল দেঙ্গে’ কথাটা উচ্চারিত হতো। কেবল হুমকি নয়, শুরু হয়ে গিয়েছিল দমন-পীড়নও। তখনকার ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে জেলে ছিলেন। এই দুঃসহ অবস্থায় গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দমন-পীড়ন প্রতিহত করার জন্য মুসলিম লীগ বিরোধী একটি বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা জনগণ প্রত্যাশা করছিল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হওয়ার ২২ মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, দিক-নির্দেশহারা। পাকিস্তানি শাসক ও শোষকগোষ্ঠীর ভাষা-সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ, পূর্ব বাংলা-বিরোধী কার্যকলাপ, গণতন্ত্র ও শাসনতন্ত্র সম্পর্কে অনিহা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্ভিক্ষাবস্থা প্রভৃতি নতুন রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্নসাধকে ধূলিস্যাৎ করে চলছিল। কোনো বিরোধী কথা বললেই ‘শির কুচাল দেঙ্গে’ কথাটা উচ্চারিত হতো। কেবল হুমকি নয়, শুরু হয়ে গিয়েছিল দমন-পীড়নও। তখনকার ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে জেলে ছিলেন। এই দুঃসহ অবস্থায় গণতন্ত্র ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দমন-পীড়ন প্রতিহত করার জন্য মুসলিম লীগ বিরোধী একটি বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা জনগণ প্রত্যাশা করছিল।
এই অবস্থায় প্রায় ৩০০ প্রতিনিধি নিয়ে সম্মেলনের ভেতর দিয়ে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠা পায়। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই দল গঠন অতুল ও প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন প্রতিষ্ঠার তারিখ দুটো ছিল পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য মহেন্দ্রক্ষণ। পাকিস্তানি মতাদর্শ দ্বি-জাতিতত্ত্ব ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এই মানচিত্রের জনগণের আবহমান থেকে চলে আসা গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চলমান ধারা থেকে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছিল, এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে শুরু হয় ছিন্ন হয়ে যাওয়া ওই ধারার সাথে সংযোগ প্রতিষ্ঠার আয়োজন। এই আয়োজন যে স্বার্থক ও সফল হয়েছিল, ইতিহাসই তা স্বাক্ষর রেখেছে। সকালই বলে দেয় দিনটা কেমন যাবে প্রবাদের সত্যতা প্রমাণ করে রোজ গার্ডেনের সম্মেলন প্রকৃত অর্থেই বাংলার মাটিতে গোলাপ ফুটিয়ে চলছে।
দ্বিতীয় সম্মেলন ছিল বাহান্নর ভাষা আন্দালনের পটভূমিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন সামনে রেখে। তরুণ শেখ মুজিব তখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ৩০০ কাউন্সিলর নিয়ে ১৪-১৬ নভেম্বর ১৯৫৩ অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ-বিরোধী যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং ২১-দফা কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত হয়। এই দুই সিদ্ধান্ত যে কতটা তৎপর্যম-িত ও যুগান্ত সৃষ্টিকারী ছিল, তা ইতিহাস স্বাক্ষর রেখেছে। তৃতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫, পাকিস্তানি শাসক-শোষক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও ৯২(ক) ধারা জারি, যুক্তফ্রন্ট ভেঙে যাওয়া, পূর্ব বাংলার আইন সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বিরোধী দলে অবস্থান নেওয়ার প্রেক্ষাপটে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ পর্যুদস্ত অবস্থার মধ্যে ছিল। এই সম্মেলনের অতীব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেওয়া। চতুর্থ সম্মেলন ৮৯৬ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ৭-৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭, টাঙ্গাইলের কাগমারিতে। তখন কেন্দ্রে ও প্রদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। চরম দলাদলির মধ্যে এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, দলের কোনো নেতা একই সাথে দলের কর্মকর্তা ও মন্ত্রিপদে থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শেখ মুজিব স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড়Ñ এটা প্রমাণ করে শেখ মুজিব মন্ত্রিপদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ওই সম্মেলনের চার মাস পরে ১৩-১৪ জুন ১৯৫৭, অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে দলের ভাঙন অনিবার্য হয়। মওলানা ভাসানী গঠন করেন ন্যাপ। এই সম্মেলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যুক্ত নির্বাচন প্রথার পক্ষে দৃঢ় থেকে সংবিধান প্রণয়ন ও নির্বাচনের পক্ষে জোর অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। পাকিস্তানের ক্ষমতায় থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা লাভ এই সম্মেলনকে তাৎপর্যময় করে রেখেছে। ৬-৮ মার্চ ১৯৬৪, অনুষ্ঠিত পঞ্চম সম্মেলন ছিল সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন ও প্রত্যাহার, আইয়ুব মোনায়েমের দমন-পীড়নের শাসন, রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দল গঠন না করে এনডিএফে থাকার অভিজ্ঞতা, দলীয় নেতা সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু প্রভৃতি সামনে নিয়ে। ১ হাজার কাউন্সিলর নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে প্রবীণ নেতারা এনডিএফে থেকে কাজ করতে মরিয়া থাকলেও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা।
এই সম্মেলন থেকেই শুরু হয় শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার পথ-পরিক্রমা। ষষ্ঠ সম্মেলন ১ হাজার ৪৪৩ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে ১৮-২০ মার্চ ১৯৬৬ অনুষ্ঠিত হয় পাক-ভারত যুদ্ধ ও শেখ মুজিবের ৬-দফা ঘোষণার পটভূমিতে। কাউন্সিল ৬-দফা গ্রহণ করবে না এটাই ছিল জোর প্রচার। কিন্তু দলীয় কাউন্সিলরা তা মিথ্যা প্রমাণ করে বাঁচার দাবি ৬-দফার পক্ষে সক্রিয় সমর্থন ঘোষণা করে। এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো শেখ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি এবং তার সহযোগীদের কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন। এই মাইলফলক অতিক্রমের পর আওয়ামী লীগের আর পিছুটান ছিল না।
সপ্তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯ আগস্ট ১৯৬৭, আগরতলা মামলার মধ্যে পিডিএমপন্থিদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে কঠিন এক পরিস্থিতির মধ্যে। নেতৃবৃন্দের জেলে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার এড়িয়ে ১৮০ কাউন্সিলর উপস্থিত ছিল। বিরোধিতার মধ্যেও এই সম্মেলনে ৬-দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাৎপর্যম-িত। অষ্টম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৪ জুন ১৯৭০। গণ-অভ্যুত্থান, আগরতলা মামলা প্রত্যাহার, আইয়ুবের পতন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয়ী এক পরিবেশের মধ্যে। ১ হাজার ১৩৮ কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সম্মেলন ৬-দফা ও ১১-দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে সত্তরের নির্বাচনে যাওয়ার ভিত সৃষ্টি করে তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে আছে। এটাই ছিল পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রে আওয়ামী লীগের শেষ সম্মেলন।
পাঁচ
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের স্বাধীন দেশে প্রথম সম্মেলন হলো নবম সম্মেলন। যুদ্ধবিধস্ত দেশের পুনর্গঠন, পুনর্বাসন, নতুনভাবে সব গড়ে তোলাসহ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে ৭-৮ এপ্রিল ১৯৭২, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে সংবিধান রচনার ভিত সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের দশম সম্মেলন হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ সম্মেলন। ১৮-২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে নীতি-নির্ধারণী সুদীর্ঘ ভাষণের পর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত প্রসারিত করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড় এটা জীবনে বারবার প্রমাণ করে আমাদের জাতির পিতা এই সম্মেলনকে মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের স্বাধীন দেশে প্রথম সম্মেলন হলো নবম সম্মেলন। যুদ্ধবিধস্ত দেশের পুনর্গঠন, পুনর্বাসন, নতুনভাবে সব গড়ে তোলাসহ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রত্যয় নিয়ে ৭-৮ এপ্রিল ১৯৭২, এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জাতীয় চার মূলনীতির ভিত্তিতে সংবিধান রচনার ভিত সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের দশম সম্মেলন হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ সম্মেলন। ১৮-২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে নীতি-নির্ধারণী সুদীর্ঘ ভাষণের পর সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতির নতুন দিগন্ত প্রসারিত করেন। ব্যক্তির চাইতে দল বড়, দলের চাইতে দেশ বড় এটা জীবনে বারবার প্রমাণ করে আমাদের জাতির পিতা এই সম্মেলনকে মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার অনুপস্থিতি, হত্যা-ক্যুয়ের রাজনীতি, প্রত্যক্ষ সামরিক কর্তার শাসন, দল ভাঙাভাঙিসহ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ৩-৪ এপ্রিল ১৯৭৭, অনুষ্ঠিত হয় একাদশ সম্মেলন। পাকিস্তানের মুসলিম লীগের দশা হবে আওয়ামী লীগের মতো অর্থাৎ, দলটি হবে ছত্রখান ও নিশ্চিহ্ন এই প্রচারের মধ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় ঐক্য রক্ষা করা, পদ দখলের চক্রান্ত প্রতিহত করা এবং তৃণমূলে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে এই সম্মেলনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ভেতর দিয়ে এই সম্মেলন সমাপ্ত হয়।
দ্বাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ৩-৫ মার্চ ১৯৭৮। পরোক্ষ সামরিক কর্তা জিয়ার দুঃসহ অন্ধকারাচ্ছন্ন শাসনের মধ্যে। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের শূন্যতার অভাব অনুভূত এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকলেও তৃণমূলে দল গুছিয়ে উঠতে এই সম্মেলন সাহায্য করে। মাত্র আট মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় জিয়ার তথাকথিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর এবং সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলন ১১-দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশের অস্থিতিশীল ও নাজুক অবস্থায় উল্লিখিত সম্মেলন ৩টি ছিল মার্কটাইম করার অর্থে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
ছয়
১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১, অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ সম্মেলন আওয়ামী লীগ আর সেই সাথে দেশের ইতিহাসের এক বিশেষ মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রবাসে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত করে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা ভোট ও ভাতের রাজনীতিতে সূচিত হয় নতুন এক অধ্যায়। এই সম্মেলনের পর সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হলে আবারও দেশে এক অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কবলে পড়ে। আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে ব্যাকেট দিয়ে দল গঠনের চক্রান্ত শুরু হয়। এত কিছুর মধ্যেও দলটি ভাঙনের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে চলতে থাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ১৫ দলের আন্দোলন। ফলে চতুর্দশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হয়। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে দল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে থাকে।
১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১, অনুষ্ঠিত ত্রয়োদশ সম্মেলন আওয়ামী লীগ আর সেই সাথে দেশের ইতিহাসের এক বিশেষ মাইলফলক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রবাসে অবস্থানরত জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলন সভাপতি নির্বাচিত করে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার তথা ভোট ও ভাতের রাজনীতিতে সূচিত হয় নতুন এক অধ্যায়। এই সম্মেলনের পর সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হলে আবারও দেশে এক অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ক্যুয়ের ভেতর দিয়ে এরশাদ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কবলে পড়ে। আওয়ামী লীগের নাম নিয়ে ব্যাকেট দিয়ে দল গঠনের চক্রান্ত শুরু হয়। এত কিছুর মধ্যেও দলটি ভাঙনের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। এরই মধ্যে চলতে থাকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ১৫ দলের আন্দোলন। ফলে চতুর্দশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে বিলম্ব হয়। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে দল রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে উঠতে থাকে।
এই অবস্থায় ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ১৯৮৭, অনুষ্ঠিত হয় চতুর্দশ সম্মেলন। এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে আরও গুছিয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ও বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়। ’৯১-এর সূক্ষ্ম কারচুপির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের অনমনীয় দৃঢ়তা ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশ আবারও সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসে। এ অবস্থায় ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২, অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চদশ সম্মেলন। বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতির পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থনৈতিক নীতিমালার আলোকে ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন করা ছিল এই সম্মেলনের তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। আওয়ামী লীগ আবার প্রমাণ করে লক্ষ্য ও নীতির প্রতি অবিচল থেকে সঠিক সময়ে কৌশলে পরিবর্তিত হওয়া দলটির জন্য স্বাভাবিক বিষয়। সম্মেলনের পর যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গণসংগ্রাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণ-আন্দোলন প্রভৃতির কারণে ষষ্ঠদশ সম্মেলন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হয় না।
গণসংগ্রামে বিজয়ের প্রেক্ষাপটে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এলে ৬ ও ৭ মে ১৯৯৭, ষষ্ঠদশ সম্মেলনে মিলিত হয়। সুদীর্ঘ বছর পর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন দেশকে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যাভিমুখী পথে ঘুরে দাঁড়াতে যথার্থ ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলে নির্বাচন সামনে থাকায় সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও বিশেষ সম্মেলন ২৩ জুন ২০০০ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন গণতন্ত্র উন্নয়ন ও মুুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় দেশকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে প্রভূত ভূমিকা পালন করে। এই সম্মেলনের পর ২০০১ সালে ভোট ডাকাতির নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত হতে বাধ্য করা হলে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা ও নিশ্চিহ্ন করতে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়।
এই পরিস্থিতি রুখে দাঁড়ানোর ভেতর দিয়ে ২৬ ডিসেম্বর ২০০২, সপ্তদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন দলকে উজ্জীবিত রাখতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন চরমে পৌঁছে। এদিকে বিএনপি-জামাত জোট ২০০৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও কুক্ষিগত করতে চাইলে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন। ফলে যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয় না। পরবর্তীতে আসে এক-এগারোর জরুরি আইনের সরকার। রাজনীতি থাকে নিষিদ্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে প্রথমে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধা দেওয়া হয়। পরে নেত্রীকে কাটাতে হয় বন্দী জীবন। কিন্তু এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। নির্বাচনে সভানেত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে।
জনগণের ভোটে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ ২৪ জুলাই ২০০৯, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অষ্টাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠান করে। এই সম্মেলন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক মাইলফলক বিশেষ। এই সম্মেলনে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন ঘোষণাপত্র গ্রহণ এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় প্রত্যয় এই সম্মেলনকে তাৎপর্যম-িত করে তোলে। সরকার পরিচালনায় সাফল্য এবং দেশ ও জনগণের অব্যাহত উন্নতি ও অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ঊনবিংশতম সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলন জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নতি ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল ও সংবিধান বহির্ভূত পথে ঠেলে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি-জামাত জোটের যুদ্ধংদেহী কার্যকলাপ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে তিন বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও মূলত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচনের কারণে সম্মেলন পিছানো হয়। এখন আওয়ামী লীগ ২০তম সম্মেলনের দোরগোড়ায়।
সাত
এমন একসময়ে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন হতে যাচ্ছে, যখন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দলটি সাত বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার আজ দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত। দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তির সৃষ্ট বাধা-বিপত্তি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারার মধ্যেও দেশবাসী আজ জাতির পিতা ও লক্ষ লক্ষ শহীদের স্বপ্নসাধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশকে জন্মলগ্নের লক্ষাভিমুখী পরিচালনা করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। সরকারের সৃজনশীল প্রয়াস ও কর্মোদ্যোগের সাথে দেশবাসীর ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা ও কর্মউদ্দীপনা একই খাতে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন এক বাংলাদেশ ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
এই বাংলাদেশ শহীদের রক্তস্নাত স্বপ্নের সোনার বাংলা। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। একবিংশ শতকের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ হয়ে ওঠার দাবি নিয়েই দেশের গৌবরম-িত জনগণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের সম্মেলন যেমন যথাযথ রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মপন্থা গ্রহণে ভুল করে নি; তেমনি এবারেও সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই এগিয়ে যাবে। জনগণের সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর করতে দলের সব নেতা-কর্মী-সদস্যদের সচেতন সক্রিয় ও উদ্যোগী করা; শ্রম ও মেধা, ত্যাগ ও কার্যকারিতা এবং নবীন ও প্রবীণদের সম্মিলন ঘটিয়ে কেন্দ্রে যথাযথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রভৃতি অতীতে, যা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো করে গণচেতনা ও গণসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে; এবারেও তা করবে বলেই জনগণ দৃঢ়ভাবে মনে করে।
এমন একসময়ে আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশন হতে যাচ্ছে, যখন জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে দলটি সাত বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে প্রদত্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে দেশ, জাতি ও জনগণের সেবা করে যাচ্ছে। বিশ্বের বুকে গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার মানোন্নয়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার আজ দেশে-বিদেশে সর্বত্র প্রশংসিত। দেশি-বিদেশি পরাজিত শক্তির সৃষ্ট বাধা-বিপত্তি এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পাঁয়তারার মধ্যেও দেশবাসী আজ জাতির পিতা ও লক্ষ লক্ষ শহীদের স্বপ্নসাধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশকে জন্মলগ্নের লক্ষাভিমুখী পরিচালনা করার কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত। সরকারের সৃজনশীল প্রয়াস ও কর্মোদ্যোগের সাথে দেশবাসীর ইচ্ছে-আকাক্সক্ষা প্রত্যাশা ও কর্মউদ্দীপনা একই খাতে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন এক বাংলাদেশ ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
এই বাংলাদেশ শহীদের রক্তস্নাত স্বপ্নের সোনার বাংলা। বর্তমান সময়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। একবিংশ শতকের বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার সাথে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ হয়ে ওঠার দাবি নিয়েই দেশের গৌবরম-িত জনগণের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে কখনও আওয়ামী লীগের সম্মেলন যেমন যথাযথ রাজনৈতিক সাংগঠনিক কর্মপন্থা গ্রহণে ভুল করে নি; তেমনি এবারেও সঠিক ও যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই এগিয়ে যাবে। জনগণের সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর করতে দলের সব নেতা-কর্মী-সদস্যদের সচেতন সক্রিয় ও উদ্যোগী করা; শ্রম ও মেধা, ত্যাগ ও কার্যকারিতা এবং নবীন ও প্রবীণদের সম্মিলন ঘটিয়ে কেন্দ্রে যথাযথ নেতৃত্ব গড়ে তোলা প্রভৃতি অতীতে, যা আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো করে গণচেতনা ও গণসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছে; এবারেও তা করবে বলেই জনগণ দৃঢ়ভাবে মনে করে।
এটা তো ঠিক যে, আওয়ামী লীগ মানুষের চেতনা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ ও অঙ্গীকার করার ফলেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে ক্ষমতায় এসে দেশ সেবার সুযোগ পেয়েছে। সময় শেষে দলকেই আবার জনগণের কাছে জনতার রায়ের জন্য যেতে হবে। সরকার নয়, দলকেই দাঁড়াতে হবে জনগণের সামনে। মানুষ সরকারকে নয় ভোট দেবে দলকে, দলীয় প্রার্থীকে। এই দিক বিবেচনায় যতই আগামী নির্বাচন সামনে আসছে, ততই দলের আর সেই সাথে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মী-সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে যাচ্ছে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপযোগী সংগঠন হিসেবে এই সম্মেলনের ভেতর দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চেতনা শাণিত করে নব উদ্যম নিয়ে বের হয়ে আসবে এবং অতীত সম্মেলনগুলোর ঐতিহ্যের ধারাকে অগ্রসর করে নেবে এটাই বর্তমানে জনগণের একান্ত প্রত্যাশা।
মূল প্রবন্ধঃ শেখর দত্ত, উত্তরন নিউজ
Tuesday, May 31, 2016
‘রেহানাকে নিয়ে এসেছি’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
‘রেহানাকে নিয়ে এসেছি’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা
‘রেহানাকে নিয়ে এসেছি’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা
‘রেহানাকে নিয়ে এসেছি’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা
টোকিও (জাপান) থেকে: ‘সেদিনের জাপান সফরে যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একমাত্র শেখ রেহানাই জীবিত রয়েছে, তাই তাকে নিয়ে এসেছি’। এ কথা বলতেই কণ্ঠ ধরে এলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বললেন, ‘জাপানে বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সারি ভবন হয়েছে, তার উদ্বোধনে শেখ রেহানাকে থাকতেই হবে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্কের যে ভিত ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৈরি করে গিয়েছিলেন, তা যে শেখ রেহানা সেদিন দেখেছে।’
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সঙ্গে তার দুই ছেলে-মেয়ে শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল এসেছিলেন। সে কথাই স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বাকরুদ্ধ হয়ে আসে তার। ভাঙা কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা দু’টি বোন দেশের বাইরে ছিলাম বলেই প্রাণে বেঁচে গেছি।’
শনিবার (২৮ মে) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অত্যাধুনিক নকশার নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপান আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে জাপানের সহযোগিতার কথা বাংলাদেশ চিরকাল স্মরণ করবে। সহযোগিতার কারণে এ দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ১৯৭৩ সালে জাপান সফর করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন তার সফর সঙ্গী হয়ে এসেছিলো শেখ রেহানা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে বাংলাদেশ দূতাবাসের নিজস্ব চ্যান্সারি ভবন হয়েছে, দিনটি আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের। এই আনন্দ ভাগ করে নিতে আমি আমার ছোট বোন শেখ রেহানাকেও নিয়ে এসেছি।
Monday, May 30, 2016
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
১৭ই মার্চ, ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফুর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্ম নেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে পড়াশনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। ১৮ বছর বয়সে বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের ২ মেয়ে - শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তিন ছেলে- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।
অল্পবয়স থেকেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিভার প্রকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৪০ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের ছাত্র সংগঠন নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। কট্টরপন্থী এই সংগঠন ছেড়ে ১৯৪৩ সালে যোগ দেন উদারপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে। এখানেই সান্নিধ্যে আসেন হুসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে রক্ষণশীল কট্টরপন্থী নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ।
ভাষা আন্দোলনের সময় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিব। ১৯৪৮ সালে ভাষার প্রশ্নে তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যা চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে।
পঞ্চাশের দশক তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের কাল। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন দূরদর্শীতা এবং প্রজ্ঞাসম্পন্ন এক কুশলী রাজনৈতিক নেতা। এসময় শেখ মুজিব মুসলিম লীগ ছেড়ে দেন এবং হোসেন সোহরাওয়ার্দী এবং মাওলানা ভাসানীর সাথে মিলে গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ। তিনি দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি মন্ত্রী হন মুজিব। ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৬৩ সালে হোসেন সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিব। তিনি ছিলেন আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র তত্ত্বের কট্টর সমালোচক। ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই ছয় দফা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের রূপরেখা।মুজিবের ৬ দফার প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থনে ভীত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার শেখ মুজিবকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার সমস্ত জনগণ। জনরোষের কাছে নতি স্বীকার করে এক পর্যায়ে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় শোষকগোষ্ঠী। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে গণসম্বর্ধনা দেওয়া হয়৷সেখানেই উত্থাপিত হয় এগার দফা দাবি যার মধ্যে ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। লাখো মানুষের এই জমায়েতে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়৷
১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। তিনি বলেন, “একসময় এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। ... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া আর কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। ... জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি- আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ”।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির পুরোপুরি বিপক্ষে ছিলো। আওয়ামী লীগের সরকার গঠন ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদের অধিবেশন ডাকা নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। শেখ মুজিব তখনই বুঝে যান যে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। ঐতিহাসিক এ ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে শৃংখল মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ঘোষণা করেন, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। ... প্রত্যেকে ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে”।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে উত্তাল হয়ে ওঠে সারা বাংলা। মুজিবের নেতৃত্বে বাঙ্গালি জাতির এই জাগরণে ভীত ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করেন, নিষিদ্ধ করেন আওয়ামী লীগকে এবং শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
এরপর আসে ২৫ মার্চ, ১৯৭১। রাতের অন্ধকারে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর শকুনের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা; শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড।অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে কোলের শিশু- কেউ রক্ষা পায়না পাক হায়েনাদের নারকীয়তা থেকে। মুজিবকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। অবশ্য তার আগেই, পাক বাহিনীর অভিযান শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় এবং শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি করা হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। এ সরকারের অধীনেই গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী এবং শুরু হয় পাক সেনাদের প্রতিহত করার পালা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর, ৩০ লক্ষ বাঙ্গালীর প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে আসে বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেখান থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেখানেই বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে, তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন দেশে। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির জনককে বরণ করতে লাখো মানুষের ঢল নামে বিমানবন্দরে। দেশে ফিরেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু । মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানান বঙ্গবন্ধু এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাহায্য আসতে শুরু করে। শুরু হয় বাংলাদেশ পুনর্গঠনের এক নতুন যুদ্ধ। এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে রাজনৈতিক অস্থিতশীলতা সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লাগে এই চক্রটি। এসময় বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ১৯৭৪ সালে তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে এক ছাতার নীচে আনতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা ‘বাকশাল'। একই সাথে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। উল্লেখ্য, প্রথম যে দলটি নিষিদ্ধ করা হয় তার নাম বাংলাদেষ আওয়াশী লীগ, শেখ মুজিবের নিজের দল।
এর ফলে দেশে স্থিতিশীলতা আসতে শুরু করে। সমস্ত দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, ঠিখ তখনই আসে আরেকটি আঘাত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের। কেবল তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড, তৈরি করে রাজনৈতিক শূণ্যতা, ব্যাহত হয় গণতান্ত্রিক উন্নয়নের ধারা।
Saturday, May 28, 2016
শেখ হাসিনার বৈশ্বিক নেতৃত্ব বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ ‘দেশ ও বিশ্বপরিমন্ডলে শেখ হাসিনা
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ
বিশ্বশান্তি ও উন্নয়ন প্রসঙ্গ
‘দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি।’
ড. আব্দুল মোমেন:
প্রাণঘাতী যুদ্ধ-বিগ্রহ আর অযুত মানুষের হত্যাযজ্ঞের ওপর দাঁড়িয়ে শান্তির অন্বেষায় ১৯৪৫ সালে যে বিশ্ব সংস্থাটির জন্ম, সেই জাতিসংঘ পরিপূর্ণারূপে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছে কি-না তা এখনও বিশ্বজুড়ে একটি আলোচ্য বিষয়। তবুও সাবেক মহাসচিব দ্যাগ হ্যামার্শ্যল্ড-এর ভাষায় বলতে হয়, ‘জাতিসংঘ আমাদের স্বর্গে নিতে না পারলেও নরক থেকে দূরে রাখতে সমর্থ হয়েছে।’ পৃথিবীর নানা অঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ বিষয় ও সমস্যার ওপর আলোচনা, বিতর্ক ও সংলাপ যেমন জাতিসংঘ আয়োজন করে চলেছে, তেমনি সংস্থাটি অন্তত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছেÑ এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আশার কথা হচ্ছে,
এই যে জাতিসংঘের নিরলস প্রয়াসের কারণেই আজ পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, প্রসূতি মায়েরা অধিক হারে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, লাখ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে এবং কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার ভয়াল চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এই অর্জন সম্ভব হতো না, যদি বৈশ্বিক নেতৃত্বের গতিশীলতা, দৃঢ়সংকল্প ও প্রয়াস না থাকতÑ যারা স্ব-স্ব দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ইস্পাত কঠিন সংকল্প নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। তেমনি এক নেতৃত্ব জাতিসংঘের স্বীকৃৃতিসহ সারা পৃথিবীতে সুশাসনের জন্য নিজের দেশের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। নিজের দেশসহ সারা পৃথিবীতেই নিরাপত্তা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য এই নেতৃত্ব বিশ্বসভায় অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। সেই নেতৃত্ব আর কেউ নন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও আজ ন্যায় ও সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রতীক বলে খোদ জাতিসংঘই বলছে বাংলাদেশ ও দেশটির নেতা শেখ হাসিনার কথা।
এই যে জাতিসংঘের নিরলস প্রয়াসের কারণেই আজ পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে, প্রসূতি মায়েরা অধিক হারে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, লাখ লাখ শিশু স্কুলে যাচ্ছে এবং কোটি কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার ভয়াল চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এই অর্জন সম্ভব হতো না, যদি বৈশ্বিক নেতৃত্বের গতিশীলতা, দৃঢ়সংকল্প ও প্রয়াস না থাকতÑ যারা স্ব-স্ব দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ইস্পাত কঠিন সংকল্প নিয়ে কাজ করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। তেমনি এক নেতৃত্ব জাতিসংঘের স্বীকৃৃতিসহ সারা পৃথিবীতে সুশাসনের জন্য নিজের দেশের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছেন। নিজের দেশসহ সারা পৃথিবীতেই নিরাপত্তা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্তি এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য এই নেতৃত্ব বিশ্বসভায় অগ্রসর অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। সেই নেতৃত্ব আর কেউ নন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও আজ ন্যায় ও সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রতীক বলে খোদ জাতিসংঘই বলছে বাংলাদেশ ও দেশটির নেতা শেখ হাসিনার কথা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন সুশাসন ও মানবতার প্রতি বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার এই সংকল্প? কেন তিনি নিজের দেশের মানুষ এবং বিশ্বের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত? কেন তিনি বৈষম্যহীন এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি ‘সোনার বাংলা’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর? কেন তিনি জাতিসংঘের নেতৃত্বে বিশ্বে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় উগ্রবাদমুক্ত পৃথিবী উপহার দিতে প্রয়াসী? কেন তিনি নিজের দেশ এবং পৃথিবীর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় এতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ? জাতি, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ এবং দেশের সীমারেখা নির্বিশেষে কেন তিনি একটি সহনশীল ও নিরাপদ বিশ্ব গঠনে জাতিসংঘকে
অকুণ্ঠ সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন? কেন দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘ সনদের আলোকে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতার প্রতি এতটা আস্থাশীল হয়ে বৈশ্বিক শান্তির পতাকা বয়ে বেড়াতে তিনি সদা তৎপর? এ প্রশ্নগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
অকুণ্ঠ সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছেন? কেন দৃঢ়ভাবে জাতিসংঘ সনদের আলোকে আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতার প্রতি এতটা আস্থাশীল হয়ে বৈশ্বিক শান্তির পতাকা বয়ে বেড়াতে তিনি সদা তৎপর? এ প্রশ্নগুলো গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
শেখ হাসিনা এমন একটি সমাজের মানুষ যেখানে সুদূর অতীত থেকেই, ১৪৯২ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার বা ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবেরও আগে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছিল। কবি চ-ীদাসের ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, কিংবা কাজী নজরুল ইসলামের ‘গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’Ñ এসব লেখায় আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষ্য পাই। চ-ীদাসের এ দর্শনতত্ত্ব বাঙালির মনন ও মানসের এতটাই গভীরে প্রোথিত যে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী উচ্চারিত হয়েছে। মানবতাই সবার ঊর্ধ্বেÑ তেমনি এক আলোকিত পরিম-ল থেকে উঠে এসেছেন শেখ হাসিনা। তিনি এমন এক পরিবার থেকে এসেছেন, দেশ ও মানবতার জন্য আত্মত্যাগ যাদের অপরিসীম। তার পিতা সারাটা জীবন অতিবাহিত করে গেছেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যাকে জেল খাটতে হয়েছে জীবনের দীর্ঘ সময়। তিনি চেয়েছিলেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র যেখানে সকলের জন্য সমানাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। তার স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ যার মূল ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, শান্তি-সমৃদ্ধি এবং জননিরাপত্তা; যেখানে থাকবে না ক্ষুধা-দারিদ্র্য, শোষণ এবং অবিচার। এহেন একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে যখন বঙ্গবন্ধু আত্মনিয়োগ করেছেন তার সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশে, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালে তাকে সপরিবারে হত্যা করে পরাজিত পাকিস্তানিদের দোসর এদেশীয় ঘাতকচক্র। ওই ভয়াল হত্যাকা-ে শেখ হাসিনা কেবল তার পিতাকেই নয়, হারান পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে; এমনকি তার ৯ বছরের ছোট্ট শিশু ভাইকেও রেহাই দেয়নি খুনিরা। শুধু তিনি নিজে এবং তার ছোট বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
মানুষের জন্য শেখ হাসিনার জীবনসংগ্রাম এখানেই শেষ নয়, তিনি এ পর্যন্ত ২৩ বার প্রাণঘাতী হামলার শিকার হয়েছেন। প্রতিটি হামলার ক্ষেত্রেই তার প্রিয় রাজনৈতিক সহকর্মীদের অনেকেই নিহত বা আহত হয়েছেন; নয় তো পঙ্গুত্ববরণ
করেছেন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে, প্রিয় সহযোদ্ধাদের হারিয়েও শেখ হাসিনা দমে যাননি। তার লড়াই-সংগ্রাম চলছে। সারাবিশ্বে আর কোনো দেশে এমন একজন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি নিজের সর্বস্ব হারিয়েও দেশের আপামর জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং একটি উন্নত-সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন। দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।
করেছেন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে, প্রিয় সহযোদ্ধাদের হারিয়েও শেখ হাসিনা দমে যাননি। তার লড়াই-সংগ্রাম চলছে। সারাবিশ্বে আর কোনো দেশে এমন একজন নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি নিজের সর্বস্ব হারিয়েও দেশের আপামর জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার এবং একটি উন্নত-সুন্দর জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি নিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন। দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ সকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিচল থেকে তিনি কাজ করে চলেছেন নিরন্তর।
এতে সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই যে দেশ ও বিশ্বপরিম-লে শেখ হাসিনা আজ গণতন্ত্র, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার ও শান্তির প্রতীক। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে অনেকগুলো প্রস্তাব আনে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানবকল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন এবং সকল জাতিসত্তার অব্যাহত উন্নয়ন ও মুক্তি। উদাহরণস্বরূপ, তারই নেতৃত্বে ও তারই আনীত প্রস্তাবের কারণে জাতিসংঘে আজ ‘উন্নয়নের অধিকার’ একটি মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাবের কল্যাণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার কল্যাণেই আজ জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বা ‘ঈঁষঃঁৎব ড়ভ চবধপব’ চালু হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী জোরালভাবে অনুসৃত হচ্ছে।
কেন এই শান্তির সংস্কৃতি এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক? এর মূলনীতি হচ্ছে এমন একটি আবহ সৃষ্টি করা যার মাধ্যমে পরমত সহিষ্ণুতা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা যায়Ñ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা এবং নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয় নির্বিশেষে। কেননা, শান্তির সংস্কৃতি বিশ্বাস করে যে, অসহিষ্ণুতা এবং ঘৃণা থেকেই সর্বপ্রকার বিরোধ, সহিংসতা ও যুদ্ধের উৎপত্তি। তাই সকলের মাঝে যদি পারস্পরিক সহিষ্ণুতা এবং শ্রদ্ধাবোধ সৃজন করা যায়, তা হলেই আমরা যুদ্ধহীন ও সংঘাতমুক্ত এক পৃথিবী গড়তে পারব। তা হলেই সম্ভব হবে স্থায়ী উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শান্তি অর্জনÑ জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যও তাই। আশার কথা এই যে বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা অনুসৃত শান্তির সংস্কৃতি আজ বিশ্বজুড়ে, সকল জাতির মাঝেই ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ আজ সর্বোচ্চ সৈন্যদাতা রাষ্ট্র। যুদ্ধ আক্রান্ত রাষ্ট্রে যাতে সাধারণ মানুষ এবং শান্তিরক্ষীরা সুরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। বিশ্বে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি এমনকি বড়দিনের ছুটির মাঝেও জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শান্তিরক্ষী প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। শান্তিরক্ষী প্রেরণে তিনি কখনোই কার্পণ্য করেননি। এটি কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে ১ লাখ ৩৮ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ে জাতিসংঘ সারা পৃথিবীতে শান্তি রক্ষা করতে সমর্থ হচ্ছে যেসব সৈন্যের অনেকেই তাদের জীবনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। তারা প্রকৃত অর্থেই শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কারের দাবিদার।
শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে দুটি যুগান্তকারী প্রস্তাব আনে ২০১২ সালে, যা সর্বসম্মতিক্রমে বিশ্বসভায় গৃহীত হয়। এর প্রথমটি ছিল অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সংক্রান্ত, আর দ্বিতীয়টি জনগণের ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত। তিনি বিশ্বাস করেন, সবারই অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, কারোরই বাদ পড়ার কথা নয়। মানবতা ও উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখতে পারে। তাই অটিজমে আক্রান্ত এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবন যন্ত্রণা ও বঞ্চনার বিষয়টি যখন তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন উত্থাপন করেন, বাংলাদেশ দ্রুত এ বিষয়টি বিশ্বসভায় উত্থাপন করে এবং বিশ্বনেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমর্থন আদায় করে।
অটিজম এবং প্রতিবন্ধিতা সংক্রান্ত অনেকগুলো বড় বড় সভা আহ্বান করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ এবং তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামনে বিষয়টি উত্থাপিত হওয়ার পরপরই মহাসচিব তা সাধারণ পরিষদে সেগুলো প্রস্তাবিত ও অনুমোদিত হয় এবং সদস্য রাষ্ট্রসহ সবকটি জাতিসংঘ সংস্থার কর্মকা-ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্বটি অবশ্যই বাংলাদেশের এবং দেশটির নেতা শেখ হাসিনার।
বিগত ৪০ বছরের জাতীয় ও বৈশ্বিক
রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনা জানেন যে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের প্রধানতম চ্যালেঞ্জগুলো হবে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত হাজারও সমস্যা। তাই তিনি বিশ্বাস করেন এই চ্যালেঞ্জগুলো তখনই মানুষ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। একেই তিনি বলছেন জনগণের ক্ষমতায়ন। এটি সম্ভব হলে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি, সক্ষমতা এবং কার্যকরিতার সাথে মানুষ কাজ করতে পারবে, ফলে সবাই সমভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে। তাই জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি তিনি এতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে শেখ হাসিনা জানেন যে সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের প্রধানতম চ্যালেঞ্জগুলো হবে জলবায়ু পরিবর্তন, বেকারত্ব, আর্থিক সংকট, দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত হাজারও সমস্যা। তাই তিনি বিশ্বাস করেন এই চ্যালেঞ্জগুলো তখনই মানুষ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা যাবে। একেই তিনি বলছেন জনগণের ক্ষমতায়ন। এটি সম্ভব হলে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি, সক্ষমতা এবং কার্যকরিতার সাথে মানুষ কাজ করতে পারবে, ফলে সবাই সমভাবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে পারবে। তাই জনগণের ক্ষমতায়নের প্রতি তিনি এতটা গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে জনগণকে ক্ষমতায়িত করা যাবে? বিষয়টিকে তিনি ৬টি আন্তঃসংযুক্ত চলকের দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেনÑ প্রথমত; মানুষের ক্ষমতায়ন হবে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্তি সম্ভব হলে, দ্বিতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান ও মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে যাতে করে তারা নিজেরাই কর্মসংস্থান বা উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করে স্বাবলম্বী হবে, তৃতীয়ত; তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হতে পারে বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসানের মাধ্যমে, চতুর্থত; সন্ত্রাস নির্মূল করে একটি নিরাপদ জীবন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা যাবে, পঞ্চমত; এতদিন যারা উন্নয়ন ও মূল জীবনধারার বাইরে ছিল, তাদের অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতায়ন করা যাবে এবং সর্বোপরি, তাদের ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ও শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে।
শেখ হাসিনার ‘জনগণের ক্ষমতায়ন’ ধারণাটি জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনসসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও অনুরণিত হয়েছে। ২০১২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘রিও+২০ বিশ্ব সম্মেলনে’ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ‘যেমন ভবিষ্যৎ চাই’ শীর্ষক দলিল গ্রহণ করেন যার মধ্যে শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালা এবং তার সাথে জড়িত আদর্শ অনুসৃত হয়। উক্ত সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়, যার মূল ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জন। সম্প্রতি জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব যা, ‘20130 Agenda for Sustainable WorldÕ বা ÔSDGs’ নামে পরিচিত সেটির মূল ভিত্তিই ছিল রিও+২০ তে অনুসৃত শেখ হাসিনার জনগণের ক্ষমতায়ন তত্ত্ব। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা জাতিসংঘে গ্রহণ করেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের যথার্থভাবেই শেখ হাসিনা প্রণীত জনগণের ক্ষমতায়ন নীতিমালার আলোকে সবার অন্তর্ভুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, সুশাসন ইত্যাদি নির্ধারিত হয়।
তার গতিশীল নেতৃত্বে জাতিসংঘে বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত প্রতিটি বিষয়ই এসডিজি-র ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি উদ্দেশের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, অভিবাসন ও উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ-সমতা, শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার, জলসম্পদের আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য, নীল অর্থনীতি (সাগর ও মহাসাগর), বিশ্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন, পারস্পরিক সহযোগিতা, এলডিসি ইস্যু ইত্যাদি।
জাতিসংঘের সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অবিস্মরণীয় অগ্রগতি, তা মূলত সম্ভব হয়েছে দেশটির নেতা শেখ হাসিনার উন্নয়ন চিন্তা এবং জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে তার অবিচল প্রতিজ্ঞার কারণেই। সম্পদের ব্যাপক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কেবল নেতৃত্বের বিচক্ষণতা, দৃঢ়তা এবং সঠিক দিক-নির্দেশনার কারণেই বাংলাদেশ এই লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এককালে যে দেশকে বলা হয়েছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ (Bottomless Basket), যার ‘সফল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই’ বিশ্ব মোড়লেরা দেখেনি, সেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আজ ৬.৩ শতাংশ, তাও আবার এক নাগাড়ে সাত বছর ধরে। চরম দারিদ্র্য ১৯৯১ সালে যেখানে ছিল ৫৭.৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে তা কমে এসেছে ২২.৪ শতাংশেরও নিচে। একই সাথে নবজাত শিশু মৃত্যুর হার ৭৩ শতাংশ কমিয়ে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সর্বাধিক জনঅধ্যুষিত ও স্বল্প আয়তনের এক দেশের জন্য এই সাফল্য একেবারে কম নয়। আর এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কেবল শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের কারণেই।
দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক বিরোধিতা এবং নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যও শেখ হাসিনা তার দৃঢ় ও আপসহীন সিদ্ধান্তের দ্বারা দেশকে উন্নয়নের পথে যেভাবে পরিচালিত করেছেন, তার কল্যাণেই বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, অথচ পূর্বে দীর্ঘ সময় ধরে দেশটি ছিল খাদ্য ঘাটতির মধ্যে। এই ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য শেখ হাসিনা এবং তার দেশবাসী বিশ্বসভায় সাধুবাদ পেতেই পারেন। আর তারই প্রমাণ আমরা দেখি যখন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল’ এবং ‘নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল নক্ষত্র’। আমেরিকার প্রভাবশালী ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ হচ্ছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার আলোকবর্তিকা’ আর গোল্ডম্যান শ্যাক্স তাদের গ্লোবাল অবস্থানে বাংলাদেশকে এন-১১ তে উন্নীত করেছে, যার অর্থ হচ্ছে ১১টি অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ।
দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দেশের সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে একাধিক পদকে ভূষিত করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য এমডিজি-৪ পুরস্কার (২০১০)। সাউথ-সাউথ পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন ২০১৩ সালে, দেশজুড়ে ১৩ হাজার ৮০০ কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং ৪ হাজার ৫০১টি ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে সফলভাবে ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার স্বীকৃতিস্বরূপ। ২০১৪ সালে তাকে সাউথ-সাউথ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলোতে নেতৃত্বের দূরদর্শিতার স্বাক্ষর হিসেবে। ২০১৫ সালে তিনি জাতিসংঘ কর্তৃক দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন, এগুলো হচ্ছেÑ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় সফলতার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার এবং টেলিযোগাযোগ খাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার পুরস্কার বা ‘আইটিইউ অ্যাওয়ার্ড’।
২০০০ সালে যখন জাতিসংঘে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) ঘোষণা প্রদান করা হয় তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নেতা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আবার ২০১৫ সালে যখন ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা (এসডিজি) হয় তখনও তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘে নেতৃত্বদান করেন। তিনি বিশ্বের একমাত্র নেতা যিনি জাতিসংঘের উন্নয়ন সংক্রান্ত এ দুই মাইলফলক ঘোষণার সময় নিজের দেশের নেতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তার দেশ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে মর্মে ২০০০ সালের সম্মেলনে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতি দেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সেই যে সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। ২০১৫ সালের সম্মেলনে আবার যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেন (যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন করতে হবে) তখন শেখ হাসিনা বিশ্বসভায় এই প্রতিশ্রুতি দেন যে তার দেশ এই লক্ষ্যমাত্রাও যথাসময়ে পূরণ করবে।
শুধুু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি তিনি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারই স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। এ হবে এমন এক বাংলাদেশ যেখানে সবাই পাবে সমানাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুষম উন্নয়নের সুযোগ। যেখানে সমৃদ্ধি ও শান্তির মাঝে বাস করবে দেশের প্রতিটি মানুষ। সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
শুধুু সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি তিনি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে তারই স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী ও বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা। এ হবে এমন এক বাংলাদেশ যেখানে সবাই পাবে সমানাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুষম উন্নয়নের সুযোগ। যেখানে সমৃদ্ধি ও শান্তির মাঝে বাস করবে দেশের প্রতিটি মানুষ। সেই স্বপ্নই দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতার পরিধি ক্রমেই বাড়ছে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ ২ গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এক বিশাল বাজারে পরিণত হবে এ দেশগুলো। তা সত্ত্বেও এ দেশগুলোর পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ দেশগুলোর প্রতিবছর ৫ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে। বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য স্কিমের আওতায় উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রসমূহ বছরে ১৩৮ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে যার মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যায় মাত্র ৩৮ থেকে ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অর্থ পর্যাপ্ত নয়। সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোার জন্য এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অগ্রগতি যথাযথভাবে তদারকি ও মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ সাউথ-সাউথ দেশগুলোর অর্থ ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীদের একটি ফোরাম গঠনের প্রস্তাব করেছে, যা আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। সম্প্রতি চীন সাউথ-সাউথ সহযোগিতার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও
‘আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন।’
বেশি অনুদানের ঘোষণা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্ষম হয়। এ কথা আজ সারাবিশ্ব জানে যে, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ তাদের বুকের রক্ত দিয়েছে। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ পৃথিবীর সব জাতির মাতৃভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার প্রয়াসে সেই দিনটিকে জাতিসংঘ সম্মানিত করেছে, যা আজ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশে পালিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আইনের শাসনে প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র-আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।
শেখ হাসিনার শাসনের প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) বাংলাদেশে কয়েকটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। এর প্রথমটি ছিল ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের সমস্যা গঙ্গা নদীর পানির বণ্টনের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় যে ঐতিহাসিক ঘটনা সেই সময়ে ঘটে সেটি হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর। যে সমস্যার আবর্তে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দোলাচলে সেই সময় পর্যন্ত ২৫ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল, রাষ্ট্রনায়কোচিত পদক্ষেপ নিয়ে শেখ হাসিনা সেই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের অবসান ঘটান বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে শান্তি প্রতিষ্ঠার এমন নজির বিরল। মার্কিন কংগ্রেস এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই সাহসী দুই চুক্তির জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রসংশা করেছে। সম্প্রতি কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে অর্ধশতক ধরে ঝুলে থাকা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছেন ৬৮ বছর আগের ‘সীমান্ত নির্ধারণ চুক্তি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ফলে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং ন্যায়বিচার পেয়েছে দীর্ঘদিন ভাগ্যবিড়ম্বিত থাকা উভয় দেশের ছিটমহলবাসী। প্রকৃত অর্থেই শেখ হাসিনা শান্তি ও স্থিতিশীলতার মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের জন্য। আশার আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন বিশ্বের শত কোটি নিপীড়িত মানবতার জন্য।
আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ আরও একটি কারণে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করছে, তা হলোÑ একটি শক্ত, সৃজনশীল ও পরিশ্রমী অভিবাসী শ্রমিকদের দেশ হিসেবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লাখ প্রবাসী নাগরিক রয়েছেন যারা কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নে অবদান রাখছেন, তাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন। একই সাথে নিজেদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা স্বদেশে পাঠিয়ে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে এসব প্রবাসী শ্রমিকদের জীবনে থাকে অজ¯্র দুঃখগাঁথা, বঞ্চনা আর প্রতারণা কাহিনি। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা নিজেদের ন্যায্য বেতনটুকু থেকেও বঞ্চিত হন। অথচ এই প্রবাসীরাই মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে কি অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বিদেশের মাটিতে। আবার আজ তারা সেই বিদেশে থেকেও নিজের দেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে রাখছেন ব্যাপক অবদান। সহ¯্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আয় রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। দেশে বিনিয়োগ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি। ৯০ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের ওপর দেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ নির্ভর করে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এই অভিবাসী শ্রমিক এবং বিদেশে অবস্থানরত দক্ষ বাংলাদেশি পেশাজীবীদের স্বীকৃতি প্রদান করেছে; তাদের সুরক্ষা এবং দেশে তাদের বিশেষ সম্মানের ব্যবস্থা করেছে এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গ্রহণ করেছ নানামুখী পদক্ষেপ। প্রবাসে তাদের সমস্যা সমাধানে নিদের দেশের সরকারি প্রতিনিধি/কূটনীতিকদের যেমন তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন ঠিক তেমনি বিশ্বসভায় তিনি এই দাবি তুলেছেন যে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে হোস্ট কান্ট্রি বা শ্রমিকদের অবস্থানকারী রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক। তাদেরই এটি নিশ্চিত করা কর্তব্য যাতে তাদের দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের কেউ শোষণ, নির্যাতন বা কোনোরকম বৈষম্য বা বঞ্চনার শিকার হতে না হয়। একই সাথে উন্নত দেশগুলোরও এ বিষয়ে যতœবান হওয়া উচিত যাতে তাদের দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষিত হয় এবং সেই সব সংগ্রামী শ্রমজীবী জনতা যেন কোনো প্রকার শোষণ, নির্যাতন বা প্রতারণার শিকার না হন।
দেশে এবং বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকার আদায়ে এতটা সোচ্চার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কণ্ঠস্বর হতে পারে বলেই হয়তো বাংলাদেশ গত ৬টি বছরের জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে এবং বিভিন্ন কমিটিসমূহের নির্বাচনে জয়লাভ করে নির্বাচিত হয়েছে। বস্তুত, এ সময়ের মধ্যে কোনো আন্তর্জাতিক নির্বাচনেই বাংলাদেশ পরাজিত হয়নি; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের কথা ভেবে, বাংলাদেশ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে ওইসব নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করে নিয়েছে। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ তথা বিশ্ব নেতৃত্বের আস্থা এবং প্রগাঢ় ভরসারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে এসব আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে।
জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটির চেয়ার হিসেবে অধিকাংশ বিতর্কেই বাংলাদেশ সকল সদস্যকে মতৈক্যে নিয়ে আসতে পেরেছে। পিস বিল্ডিং কমিটি (পিবিসি) বা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইসিওএসওসি) চেয়ার হিসেবে বিশ্বব্যাংকে জাতিসংঘ কমিটিসমূহের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশে। সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের চেয়ার হিসেবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে বাধাসমূহ ও করণীয় চিহ্নিতকরণে বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় ভূমিকা গ্রহণ করে। জাতিসংঘের ব্যুরো সদস্য এবং এলডিসি গ্রুপের চেয়ার হিসেবে ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা (আইপিএও) প্রণয়নে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখে; শুধু তাই নয়,
জাতিসংঘের বিভিন্ন ফান্ড যেমন ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা কমিশন ইত্যাদির চেয়ার হিসেবে ওইসব অঙ্গ সংগঠনের কর্মপরিকল্পনায় ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন ফান্ড যেমন ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএন উইমেন, জাতিসংঘ জনসংখ্যা কমিশন ইত্যাদির চেয়ার হিসেবে ওইসব অঙ্গ সংগঠনের কর্মপরিকল্পনায় ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যতম ভূমিকা পালন করে।
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটির ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উক্ত কমিটির প্রস্তাব সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মতৈক্যের অর্জনে সফল হয়। ‘মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের বন্ধু’ রাষ্ট্রসমূহের সদস্য হিসেবে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও অবসানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সাহসের সাথে উটের জকি ও দাস হিসেবে শিশুদের ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মাঝে সোচ্চার জনমত গড়ে তোলেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি শিশুদের উদ্ধারের নির্দেশ দেন ও তাদের উদ্ধার পরবর্তী পুনর্বাসনের পদক্ষেপ সংক্রান্ত সার্ক সম্মেলনে ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘের ‘ফ্রেন্ডস অব মিডিয়েশন’, ‘ফ্রেন্ডস অব ইনএ্যলিনেবল্ রাইটস অব প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রেন্ডস অব নো ফুড ওয়েস্ট, নো ফুড লস’ ইত্যাদি ভূমিকায় মানবতার মর্যাদা রক্ষা এবং জাতিসংঘ সদনের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বস্তুতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি অত্যন্ত সম্মানজনক সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং বর্তমানে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক বাংলাদেশকেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কেবল সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবেই নয়, সক্ষমতার সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশের সুনাম আজ জাতিসংঘে ব্যাপক। জাতিসংঘের ‘হি অ্যান্ড শী’ প্রোগ্রামের চ্যাম্পিয়ন হিসেবেও বাংলাদেশের নাম চলে আসে সবার আগে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শিক্ষাই সর্বাগ্র’ শীর্ষক প্রকল্পে এবং মহাসচিবের স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মহাসচিবের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষী নিয়োগ সংক্রান্ত সিনিয়র পরামর্শক কমিটির সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীদের নীল হেলমেট প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক রিভিউ কমিটির ঢাকা কনফারেন্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ, ২০১৪ সালে এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দান করে। প্রতি ১০ শান্তিরক্ষীর মধ্যে একজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ নারী শান্তিরক্ষীদের জন্য নীল হেলমেট, বর্ম ও তলোয়ার চালানো এবং পুলিশের একটি নারী ইউনিট বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
জলবাযু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে জাতিসংঘে অত্যন্ত সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপূরণীয় ক্ষতি ও চ্যালেঞ্জকে বিশ্ববাসীর সামনে যথার্থভাবে তুলে ধরতে তিনি সদা সচেষ্ট থেকেছেন। তিনিই একজন নেতা যিনি এ বিষয়টিকে বিশ্ববাসীর সামনে বারংবার তুলে ধরেছেন যে, পরিবেশ দূষণকারী না হয়েও স্বল্পোন্নত ও দ্বীপ-রাষ্ট্রসমূহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে রয়েছে। কেবল বাগাড়ম্বর বা উচ্চবাচ্য না করে এ বিষয়টি তিনি কর্মপরিকল্পনার মধ্যে গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে কীভাবে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগুনো যায় তা নিজে তদারক ও কাজ করে চলেছেন। আজ সম্পদের স্বল্পতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত দুটি ফান্ড গঠন করেছে। তাই সংগত কারণেই জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাকে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কেননা পরিবেশ সুরক্ষার জন্য তিনিই বিশ্বের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর; এবং পরিবেশ নীতিমালা গঠনের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা রেখেছেন। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছেন তিনিই। তার প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই জাতিংঘে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিষয়ের দায়িত্ব বিষয়ক রাষ্ট্রদূত’ ফোরাম (Ambassadors with Responsibility to Climate Change-ARC) এবং ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বন্ধু’ (Friends of Climate Change-FCC) গঠন করা হয়েছে, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ ঘোষণার পরই আমরা দেখতে পাই যে অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই জটিল ইস্যুতে এগিয়ে আসছেন।
যুদ্ধ-বিগ্রহ, ভয়াল বন্যা, অনাবৃষ্টি, ক্ষরা, নদীভাঙন ইত্যাদি নানা কারণে সাম্প্রতিককালে দেশে দেশে যে হারে মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বা নিজ দেশে কাজ হারিয়ে দেশান্তরী হয়ে পড়ছে জীবিকার তাগিদে, কিংবা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় খুঁজছে বিভিন্ন দেশে তখন সেই সব কঠিন সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে, যারা হয়তো কোনোভাবেই এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়।
শেখ হাসিনা কথা নয়, কাজে বিশ্বাসী। লক্ষ্য অর্জনে তিনি পিছপা নয় এক কদমও। তার অক্লান্ত প্রয়াসের ফলে বাংলাদেশের কর্মজীবী জনসংখ্যার মাঝে আজ নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৩৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা পূর্বে ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। আজ বাংলাদেশে সরকার প্রধান একজন নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং সংসদ উপনেতাও নারীÑ নারীর ক্ষমতায়নের এ এক অনবদ্য সংযোগ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশ সেই গুটিকয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম যেখানে বছরের শুরুতে দেশব্যাপী শিশুদের মধ্যে ৩২৬ মিলিয়ন বই বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে। বাংলাদেশ সেই রাষ্ট্র যেখানে এনজিওরা উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের সাথে সমান তালে অংশগ্রহণ করে। তাই বাংলাদেশ আজ তার উদ্ভাবনী সুশাসন প্রক্রিয়া এবং যুক্তির নিরখে চলার জন্য বিশ্ব দরবারে সম্মানিত। সামগ্রিক এই প্রক্রিয়ায়, সন্দেহ বা বিস্ময়ের কোনো অবকাশই নেই যে, সেই বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনা, আজ জাতিসংঘ তথা বিশ্ব পরিম-লে শান্তি ও ন্যায্যতার এক মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজের দেশ ও জনগণকে তুলে ধরেছেন সবার ওপরে।
জয়তু বিশ্বনেতা শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান
* জনগণের ক্ষমতায়ন মডেল : অস্থিরতা, সহিংসতা, পরমত অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য এবং ব্যাপক জন-অসন্তোষের ক্ষেত্রে এই মডেল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
* কালচার অব পিস : বিগত সময়ে সরকারের থাকাকালীন বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রচলন করা হয়। জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে এই ধারণা ব্যাপক সমর্থন লাভ করে; কেননা এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, যা সমগ্র জাতিসংঘ ব্যবস্থার মাঝে অনুরণিত হয়।
* শান্তিরক্ষা কার্যক্রম (পিস কিপিং) : শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা সর্বজনবিদিত ও স্বীকৃত। জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিম-লে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। তার গতিশীল নেতৃত্বে বিশ্বে আজ সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে সমাদৃত বাংলাদেশ।
* শান্তি বিনির্মাণ (পিস বিল্ডিং) : তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শান্তি বিনির্মাণের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছে। স্বল্পদিন হলো এ সংক্রান্ত কমিশন গঠিত হয়েছে, যা ইউএন পিস বিল্ডিং কমিশন নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এর গুরুত্বপূর্ণ মিটিংসমূহে সভাপতিত্ব করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে এ সংক্রান্ত সব কার্যক্রমের আলোচনায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে।
* বহুমাত্রিক নেতৃত্ব : নানামুখী জাতীয় ও বৈশ্বিক ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা নন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার অবিচল নেতৃত্বে বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি এবং অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থায় সভাপতি এবং সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছে। বিগত ছয় বছরে বাংলাদেশে কোনো একটি নির্বাচনেও পরাজিত হয়নি। সকল দেশ ও তাদের নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ এবং তার নেতা শেখ হাসিনা।
* সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মডেল দেশ : জাতিসংঘ মহাসচিবের ভাষ্যমতে বাংলাদেশ এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কেবল স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যেই নয়, অনেকগুলো উন্নত দেশের চেয়েও বাংলাদেশের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্য ব্যাপক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এর সফল বাস্তবায়ন তদারক ও মূল্যায়ন করে থাকেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
* ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের সুরক্ষা ও নেতৃত্ব দান : বর্তমানে বাংলাদেশ ৪৮টি স্বল্পোন্নত দেশের নেতা ও মুখপাত্র। তাই জাতিসংঘ তথা আন্তর্জাতিক ফোরামে এসব দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের নেতৃত্বও বাংলাদেশেরই। সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচিত হয়; বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাই বাংলাদেশকে এই পদে আসীন করেছে। এলডিসি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থরক্ষায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
* ভিন্ন জীবনের মানুষের সমস্যাকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই জাতিসংঘের সকল রাষ্ট্রের কাছে আজ অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও অটিজম সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সমস্যাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব পৃথিবীর সব কটি রাষ্ট্রের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেছে। বিষয়টির প্রবক্তা হিসেবে বাংলাদেশের নাম আজ সব দেশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
* জলবায়ুর ঝুঁকি আক্রান্তদের সমস্যায় নেতৃত্ব : জাতিসংঘের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে কাজ করে দেখিয়েছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ঝুঁকি কতটা। এ সমস্যার কারণ খুঁজে আর কোনো মানুষ যেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরণার্থী না হয়, বাস্তুচ্যুত না হয় তার ব্যবস্থা করার জন্য জোরাল দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্পদশালী দেশগুলো সম্পদের অপব্যবহারের মাধ্যমে আজ পৃথিবীর পরিবেশের এই দশা করেছে, যদিও তাদের অবিমৃষ্যকারিতার ফল পেতে হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো, যারা হয়তো কোনোভাবে এই ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা জলবায়ু’র কারণে উদ্বাস্তু হওয়ার জন্য দায়ী নয়। অথচ তাদেরই সবচেয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এই অবস্থা হতে উত্তরণের দায় এবং দায়িত্ব উভয়ই উন্নত বিশ্বকে নিতে হবে। হয় তাদের এসব নানান প্রক্রিয়ায় করা পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে; অথবা তাদের এমন কাজ করতে হবে যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ না বাধে বা মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য না হয়। জলবায়ু ঝুঁকি ফোরাম (সিভিএফ) এবং জলবায়ু ঝুঁকিপ্রবণতা তদারকি (সিভিএম) গঠন করেছে বাংলাদেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিষ্ঠা করেন জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।
* আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ আইনি সমাধান : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নিয়ে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল সেই বিষয়ে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে (International Tribunal on the Law of the Seas-ITLOS) যাওয়ার যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেন, তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার ওপর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারও তাদের আইনগত ন্যায্য পাওনা পেয়েছে। কোনো সংঘাত বা যুদ্ধ ছাড়াই এহেন বিরোধ নিষ্পত্তির ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।
* জাতিসংঘের মাধ্যমে অভিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা : অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার জন্য নিরলস কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত জাতিসংঘ কমিটিতে তিনি যথার্থভাবে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং তার পক্ষে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়ছেন। অভিবাসী শ্রমিকের মানবাধিকার, কাজের পরিবেশ, বেতন ও নিরাপত্তা এসব বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য সকল রাষ্ট্রের প্রতি তিনি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
* সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশনের কণ্ঠস্বর : সাউথ-সাউথ সংক্রান্ত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ। আর সাউথ-সাউথের কণ্ঠস্বর হচ্ছেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এই রাষ্ট্রসমূহের সাফল্য ব্যাপক, যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দৃশ্যমান।
জাতিসংঘ সনদের মূল লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়ন
* প্রথমত : সহিষ্ণুতার চর্চা এবং ভালো প্রতিবেশী হিসেবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান;
* দ্বিতীয়ত : আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার সাথে একতাবদ্ধ থাকা;
* তৃতীয়ত : এই নীতির প্রতি অবিচল থাকা যে শক্তি প্রয়োগ কোনোভাবে করা হবে না, একমাত্র সামষ্টিক স্বার্থ ছাড়া;
* চতুর্থত : বিশ্বের সকল মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহকে কাজে লাগানো;
* প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সনদের এসব মূলনীতির আলোকে একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শন্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন।
Saturday, May 7, 2016
আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদেশে কোন জঙ্গি সন্ত্রাসের স্থান নেই। এদেশের মাটি ব্যবহার করে কাউকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘
অনেকে জঙ্গি সন্ত্রাসের ধোয়া তুলে এদেশকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে ১০ম সংসদের ১০ম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র। খবর বাসস’র।
অনেকে জঙ্গি সন্ত্রাসের ধোয়া তুলে এদেশকে নিয়ে খেলার চেষ্টা করবে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এদেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না।’ প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে ১০ম সংসদের ১০ম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে এদেশ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র। খবর বাসস’র।
ঘুষ-দুর্নীতিতে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার দুই পুত্র চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল এবং মানুষকে শোষণ করাই ছিল বিএনপি আমলের চিত্র।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন। রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে তাদের পরিবার শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বাংলাদেশ ওই সময় বিশ্বসভায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল। এটাই ছিল বাংলাদেশের পরিচয়। আমরা ক্ষমতায় আসার পর সেই পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসে আজকের বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল। বিএনপি নেত্রীর দুই ছেলেই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। তাদের মানি লন্ডারিং সিঙ্গাপুরের আদালতে প্রমাণিত। এফবিআই-এর লোক এসে এখানে সাক্ষী দিয়ে গেছেন। বেগম খালেদা জিয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে টাকা এনে এতিমের টাকা লুটপাট করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এক তার বার্তায় বিএনপি নেত্রীর বড় ছেলে সিমেন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ঘুষ নিয়েছিল তার উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে একটি মামলা হয়েছে। সেখানে সিমেন্স কোম্পানি থেকে যে ঘুষ নিয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্টে প্রমাণ হয়েছে এবং বিভিন্ন কোম্পানি থেকে তার ছেলে কত ডলার ঘুষ নিয়েছে এটাও উল্লেখ রয়েছে। এই টাকা সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে বিএনপি নেত্রীর ছেলের বন্ধুর নামে রাখা হয়েছে এবং সেখানে সে ধরা পড়েছে ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে। এমনকি একটি হত্যা মামলা ঘুষ নিয়েছিল তার ছেলে। এটি তাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্বীকার করেছে। এসব দুর্নীতির মাধ্যমে যাদের সম্পদ ছিল ছেড়া গেঞ্জি আর ভাঙ্গা সুটকেস তারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিজেরা মানি লন্ডারিং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা এতো টাকা ঘুষ খেয়েছে যে আমেরিকার এফবিআই’র অফিসারকে পর্যন্ত টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে। এফবিআই’র অফিসারকে কিনতে গিয়ে বিএনপির এক নেতা আমেরিকাতে আটক হয়েছে। সেখানে তার বিচার হয়েছে। ওই বিচার কার্যক্রমে বিএনপি নেত্রীর উপদেষ্টা শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তারা সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি ওঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী জয় সম্পর্কে সম্প্রতি একটি মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। জয় এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছে। বিএনপি নেত্রীকে আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এবং শেখ রেহানা আমাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়েছি। চোর-চোট্টা বানাইনি। ২১ আগস্ট আমাকে হত্যায় ব্যর্থ হয়ে এখন আমার ছেলেকে হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি বলেন, রাজনীতি জনগণের কল্যাণে এবং জনগণের জন্য। দেশের মানুষের কল্যাণে ১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৮ সালের পর ক্ষমতায় এসে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে অর্জিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬১-এ নেমে এসেছে। জনগণের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমা থেকে উঠে এসে নিম্ন মধ্য আয়ে পৌঁছেছে। ৭ বছরে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৮ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। রফতানি আয় বেড়ে ৩২ দশমিক ২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে মা ও শিশু মৃত্যু হার কমেছে। গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে মা ও শিশু মৃত্যু হার কমেছে। গণমুখী স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। মানুষের দোরগোড়ায় শিক্ষা পৌঁছে দিতে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত মেধাবৃত্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১০৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। দেশের ৭৬ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
Thursday, March 10, 2016
গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক।
SUPPORT AWAMI LEAGUE, VOTE NOUKA ONCE AGAIN
গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক।
গনতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি এ দেশের সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও গনতন্ত্রের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে একটি গুরত্বপূর্ণ এবং অন্যান্য মাইলফলক। বাংলাদেশের জনগন দেশের স্বার্থে সবসময়ই অত্যন্ত সক্রিয়।চলমান উন্নয়ন পক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রয়োজন জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহন,সহযোগিতা এবং যথাযথ সমন্বিত উদ্যেগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যেগের কারনে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলসমূহ অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছে এবং জাতীয় আয় ও বাজেটে বরাদ্দ উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরন ঘটেছে নিম্ন আয় থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে। এ ছাড়াও কৃষি,শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নতি অর্জিত হয়েছে। অয়ান্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্বীকৃতি অর্জন করায় সারা বিশ্বের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাফল্য আজ প্রমানিত। এই সাফল্য ও স্বীকৃতির সমন্বয়ে বর্তমান সরকার রুপকল্প (ভিশন) ২০২১ অর্জনে বদ্ধপরিকর।
গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও অগ্রগতির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলঃ
অর্থ, বানিজ্য ও পরিকল্পনাঃ
গত দু'বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হারছিল ৬.৩ শতাংশ। এছাড়া মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৩১৪ মার্কিন ডলার, রিজার্ভ প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রেমিট্যান্স ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সিদ্ধান্তের ফলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অবসরকালীন সুবিধাদি উল্লেখ্যযোগ্য পরিমানে বৃদ্ধি করে ইতিমধ্যে জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৭ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৫ শতাংশ। Financial reporting act ২০১৫ অনুমোদন করাও সরকারের বিরাট সফলতা।
বর্তমানে ১৯৬টি দেশে ৭২৯টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ৩১।২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ WTO তে LDC কোঅর্ডিনেটরের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় এ পর্যন্ত ১১টি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ স্বল্পোন্নত দেশসমূহকে সেবাখাতে প্রেফারেনশিয়াল সুবিধা দিচ্ছে। টিসিবির মাধ্যমে গত দুবছরে ৩৮ হাজার ৮শ ৮৩ মেট্রিক টন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় করা হয়। খাদ্যদ্রব্যের গুনাগুন বজায় রাখার লক্ষ্যে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।
গত দুবছরে ৬২টি একনেক বৈঠকে ৪২৯৮০৪.৪৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দারিদ্র্য নিরসনের সাথে প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদন (২০১৬-২০২০) করা হয়েছে।
শিক্ষাঃ
দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উপবৃত্তি ও বেতন মোকুফ সহায়তা হিসেবে ৪৯লক্ষ ২৩ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থীকে ৮৮০.২৭ কোটি টাকা বিতরন করা হয়। জাতিসংঘের বেধে দেয়া সময়সীমার তিন বছর আগেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাগত সমতা অর্জন করে। এটি সম্ভব হয়েছে মহাজোট সরকারের কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফলে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের অংশ হিসেবে ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৩.১১ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকায় একটি অটিস্টিক একাডেমী স্থাপনের জন্য পৃথকভাবে দুটি হোস্টেল নির্মান করা হবে যেখানে প্রতিটিতে ১০০ জন অটিস্টিক শিশুর আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপার্সন্ম সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিক ও কঠোর পরিশ্রমে দেশের ওটিস্টিক ছেলে-মেয়েদের কল্যানে কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
২০১৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নীট ভর্তির হার ৯৭.৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ২০.০৯ শতাংশে দাড়িয়েছে। ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২.২৩ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১ কোটি ৫৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ৯৭টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহে ইন্টারনেট সংযোগসহ ৫৫টি পিটিআইতে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৫ হাজার ৪৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিড়িয়া,ইন্টারনেট মডেম ও সাউন্ড সিস্টেম সরবারহ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনঃ
বিভিন্ন সূচকে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিফলিত হচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু ৭০।৭ বছরে উন্নীত হয়েছে। অনুর্দ্ধ ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি হাজারে ৪১ জনে দাড়িয়েছে। মাতৃমৃত্যু হারও কমে প্রতি লক্ষে ১৭০ জনে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে সনদ লাভ করে। ৫টি আর্মি মেডিকেল কলেজসহ ১২টি সরকারি মেডিকেলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় ৪০টি হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকায় জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট নির্মানের লক্ষ্যে প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। প্রায় ৬৩০০ চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পদায়ন করা হয়েছে। মবাইল ফোনে ১৬২৬৩ নম্বরে ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত অটিজম ও স্নায়ু বিকাশজনিত প্রস্তাবনা পাস হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর গত দুই বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৩১৮টি উৎপাদন নল্কূপ,৩৪টি পানি শোধানাগার, ১৯টি উচ্চ জলাধার,৭৪৩ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের পাইপ লাইন, ৮৪০৩টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন, ১৯০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন-পাবলিক টয়লেট স্থাপন করেছে।
কৃষি, খাদ্য ও শিল্পঃ
২০১৪-১৫ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৮৪।১৮ লক্ষ মেট্রিক টন। উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার ১০১ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরনে ৩০শতাংশ ভর্তূকিতে যন্ত্রাংশ সরবারহের জন্য ১৭২।১৯ কটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন্সহ হাওড় অঞ্চলে কৃষিযন্ত্র সরবারহের জন্য ১০।৬০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। গত দুই বছরে খরা,বন্যা, লবনাক্ততা সহনশীলসহ রোগ প্রতিরোধক্ষম এবং উচ্চ ফলনশীল ৬৪টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। কৃষকদের জৈবসার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহারে উৎসাহিত করার ফলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
২০১৫ সালে দানাশস্যের উৎপাদন ৩৫।৬৮ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অভ্যন্তরীন উৎস হতে ১২ লক্ষ টন চাল এবং ২ লক্ষ ৪হাজার মেট্রিক টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে মত খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৫লক্ষ ৪৬ হাজার ৯৩৯মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ই শ্রীলংকায় ২৫হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এই প্রথম অন্য দেশে চাল রপ্তানি করেছে। সরকারি খাদ্য বিতরন কর্মসুচির আওতায় ১১লক্ষ ২৭হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৪লক্ষ ৪৭হাজার মেট্রিক টন গম বিতরন করা হয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামের ধারনক্ষমতা ১৯লক্ষ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। সান্তাহার সাইল ক্যাম্পাসে ২৫০০০মেট্রিক টন ধারনক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল গুদাম নির্মান সম্পন্ন হয়েছে।
বর্তমানে মৎস্য উৎপাদনে গড়প্রবৃদ্ধির হার ৬.২৩ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ লোক মৎস্যখাত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। রুপকল্প ২০২১ অর্জনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। দুই বছরে প্রায় ১৬৫ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হয়েছে এবং ১.৬১ লক্ষ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৯.৫ হাজার কোটি টাকার বৈদশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ blue growth economyতে বাংলাদেশকে pilot country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ৬৯.৭০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৫৮.৬ লক্ষ মেট্রিক টন ১ হাজার ৯৯ কোটি ৫২ লক্ষে উন্নীত হয়েছে।
ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরনকল্পে বার্ষিক ৫ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন শাহজালাল সারকারখানা নির্মান প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। বিসিক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশব্যাপী ক্ষুদ্র শিল্পে ৩৮৯০ ও কুটিরশিল্প খাতে ৮৯৩৪ জন সম্ভাবনাময় শিল্পোদ্যোক্তা চিহ্নিত করে তাদেরকে শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ – সেবা- সহায়তা প্রদান করে আসছে । বিএসটিআই এর ফুড, মাইক্রবায়োলজী, সিমেন্ট ও টেক্সটাইল ল্যাবরেটরি ভারতের National Accreditiation Board for Testing Laboratories (NABL) থেকে এক্রিডিটেশন লাভ করেছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানীঃ
বিদ্যুৎ খাতে বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈর্ষনীয় সাফল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত দুই বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা (গ্রীড কানেকটেড) ১০২৮৯ মেগাওয়াট থেকে ১১৯৫২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৬৬৭৫ মেগাওয়াট। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৮১৭৭ মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২১ কিলোওয়াট আওয়ার হতে বর্তমানেও ৩৭১ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২৭০০+ মিলিয়ন ঘনফুট হয়েছে এবং সাথে সাথে বিকল্প উৎস হিসেবে আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) চিহ্নিত করা হয়েছে। Floating Storage Re-gasification Unit (FSRU) স্থাপনের জন্য Excelerate Energy (EE) Singapore এর কারিগরি সহায়তায় দৈনিক ৫০০ এমেমসিএফডি (MMCFD) ক্ষমতাসম্পন্ন LNG TERMINAL স্থাপনের কাজ শেষ হলে ২০১৭ এ জাতীয় গ্রিডে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যুক্ত করা সম্ভব হবে।
সড়ক-সেতু, রেল, নৌ ও স্থানীয় যোগাযোগ অবকাঠামোঃ
পদ্মা সেতুর মূল সেতু নির্মান এবং নদী শাসনের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি সার্ভিস এরিয়া, কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মান সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ প্রায় ২৮ ভাগ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল নির্মানে চীন সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা- চটড়্গ্রামমহাসড়কের ১৯২ কিলমিটার এর মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার চারলেনেউন্নীতিকরন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পার্বত্য চট্রগ্রামে ২২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬টি মহাসড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ থানচি- আলিকদম মহাসড়কটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সিলেটে সুরমা নদীর উপর কাজীর বাজার সেতু, মাদারীপুরেসপ্তমবাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, শেখ রাসেল সেতু, সুনামগঞ্জে সুরমা সেতু, বিরুলিয়া ও আশুলিয়া সড়কে বিরুলিয়া সেতু, আড়িয়াল খা সেতু, পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্রসেতু,কলাতলীসেতুসহবেশকিছু সেতুর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর যানযট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূদরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগ। এই ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেডএক্সপ্রেসোয়ের কাজ শুরু হয়েছে। শাহজালাজ বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বাস র্যা পিড ট্রানজিট (BRT) নির্মানের প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে। শেষ হতে চলেছে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ৮০ কিলোমিটার চারলেনের কাজ। ইতিমধ্যে ২ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৮ সেট ডিজিটাল নম্বরপ্লেট বিভিন্ন গাড়িতে সংযোজন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২লাখ ৪২৫টি ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরন করা হয়েছে। সড়ক। সেতু মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অনুন্নয়ন খাতের আওতায় সার্ফেসিং ব্যতিত ১২৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন,২৭১ কিলোমিটার কার্পেটিংসহ সীলকোট, ১হাজার ৪৭৪ কিলোমিটার ওভারলে, ২৫৩ কিলোমিটার ডিবিএসটি,২১টি সেতু নির্মান/পুনঃনির্মান,১০৭টি কালভার্ট নির্মান/পুনঃনির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৫ সালে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গৌহাটি-ঢাকা রুটে বাস সার্ভিস চালু হয়। মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে এসি বাসে ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। বিআরটিসির আওতায় ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গাবতলী ও মোহাম্মদপুরে ০২টি নতুন বাস ডিপো চালু হয়েছে।
রেলপথের উন্নয়নে ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়নসহ লাকসাম-চিনকি আস্তানা ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মান প্রকল্পের ভৌত কাজ ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়া ১০০টি মিটার গেজ ও ১৭০টি ব্রড গেজ যাত্রীবাহী গাড়ী সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে।
পায়রা বন্দরের মূল অবকাঠামো গরে তোলার জন্য ৬হাজার একর জায়গা ক্রয় করা হয়েছে। সীমিত আকারে পায়রা বন্দরের কাজ শুরু করার জন্য ১১২৮ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পায়রা গভীর সমুদ্র বদরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ‘প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদি উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত চট্রগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ৪টি জেটিতে কন্টেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু হয়েছে। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের মধ্যে এবং চাঁদপুরের মতলব ও নারায়নগঞ্জের মধ্যে দুটি নতুন রুটে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলঅধিদপ্তরের (LGED)বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার ( উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম) সড়ক, ৪৩ হাজার ২৫০ মিটার ব্রীজ/কালভার্ট নির্মান করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট সমস্যা নিরসনে LGED বর্তমানে ৭৭৩ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে মগবাজার-মৌচাক সমন্বিত ফ্লাইওভার প্রকল্পের অধীন ৮.২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চারলেন বিশিষ্ট একটি ফ্লাইওভার নির্মানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগঃ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গত দু বছরে ৬৬৮.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ কর্মসূচির আওতায় ২৪৩৯ জন ছাত্রছাত্রী/গবেষককে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ২৪০০ মেগাওয়াটবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষনতাসম্পন্ন রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন লক্ষ্যে রাশিয়ান ফেডারেশন নির্ধারিত ঠিকাদারের সাথে ৩টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জেলা/উপজেলা পর্যায়ে ১৮,১৩০ টি সরকারি অফিসে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ,ভারত,নেপাল ও ভূটান আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এওয়ার্ড ২০১৪, WITSA থেকে GLOBAL ICT Excellence Award-2014, এবং ইন্ট্যারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) থেকে ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি প্রাইজ-২০১৪ এবং ICT’s Sustainable Development Award 2015 অর্জন করেছে।মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় ১৩.০২ কোটি এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫.৪৭০ কোটিতে পৌছেছে। টেলিডেনসিটি প্রায় ৮৩.০৯ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ডেনসিটি প্রায় ৩৪.৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে সারাদেশে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফিকেশনসহ সিম/রিম রেজিস্ট্রেশন র্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরকারের অন্যতম বৃহৎ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত ১৩৭৯.৩৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। ডাক অধিদপ্তর মোবাইল মানি অর্ডার সার্ভিস ও ক্যাশকার্ড চালু করেছে। এ পর্যন্ত ৩৫০০ ডাকঘরে পোস্ট ই-সেন্টার চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড ঢাকা শহরের ১ লক্ষ পুরাতন ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেম প্রতিস্থাপনসহ ১লক্ষ ৩৯ হাজার নতুন টেলিফোন সংযোগ নতুন টেলিফোন প্রদান করেছে। ৬৪ টি জেলায় ৯৮টি উপজেলার ১০০৬টি ইউনিয়নে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫০০ কিলমিটার অপ্টিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩০০টি ইউনিয়ঙ্কে অপ্টিক্যাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এর দূরদর্শী ও সুচিন্তিত কর্ম পরিকল্পনার আলোকে টেলিটক ৩-জি প্রকল্পের আওতায় দেশের ৭টি বিভাগীয় এবং ৬৪টি জেলা শহরে ৩-জি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ SEA-ME-WE-5 নামক সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়াম এর সাথে Construction & Maintenance Agreement স্বাক্ষর করেছে। সরকার বর্তমানে ব্যান্ডউইথের সর্বনিম্ন মূল্যনির্ধারন করেছে প্রতি এমবিপিএস ৬২৫ টাকা।
সমাজকল্যান ও সামাজিক নিরাপত্তা, ভূমিহীনে ভূমিদান এবং মহিলা ও শিশু উন্নয়নঃ
পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ২৪,১৫,০০০ জন। দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লীমাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৮৩৪৯৬০। এসিডদ্বগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ১,৫০,০৫০। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আটটি উদ্যেগের একটি হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ঋণ কর্মসূচির আওতায় সুফলভোগীর সংখ্যা ৬১,৮৭৪। নারী ও শিশু উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের ফলে দুস্থ মহিলারা ভাতা পেয়ে আসছেন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদুঃস্থ মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০.১২ লক্ষ। বয়ষ্কভাতাভোগীর সংখ্যা ২৭.২২৫ লক্ষ। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ লক্ষ। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫০০০০।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে আরো যুগোপযোগী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন করা হয়েছে। এই কৌশল পাঁচ বছর মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তামূলক ভাতা কর্মসূচির স্বচ্ছলতা নিশ্চিতকল্পে ভাতাভোগীর নিজ নামে ব্যাংক হিসাব খুলে ভাতার অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রতি মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৭৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। রিচিং আউট অব স্কুল চিল্ড্রেন (ROSC) প্রকল্পের অধীনে দরিদ্র পরিবারের ৩.৯০ লক্ষ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগসহ ভাতা পাচ্ছে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকার ৩৩ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতি স্কুল দিবসে উচ্চশক্তি ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন বিস্কুট বিতরন করা হচ্ছে। ৪৯,৫৫৯টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রায় ২৮,৪৫৭ একর খাসজমির বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ২৫৪টি গুচ্ছগ্রামে ১০,৭০৩টি ভূমিহীন ও গৃহায়ন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বর ২০১৪ এ ডিওক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (DNA) আইন পাস হয়। ঢাকাসহ দেশের ৮টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা এক স্থান থেকে প্রদানের উদ্দেশ্যে ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (OCC) স্থাপন করা হয়েছে। দুঃস্থ ও অসহায় এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মহিলাদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে নির্বাচিত এনজিও'র মাধ্যমে প্রশিক্ষন প্রদান করা হয়। এই কর্মসূচির উপকার ভোগীর ১০০ শতাংশই মহিলা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ৭,৫০,০০০ জন নারীকে VGD সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়ঃ
দেশের জনগনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আটটি উদ্ভাবনী উদ্যোগের অন্যতম ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লি উন্নয়নের অংশ হিসেবে ‘চরজীবিকায়ন কর্মসূচি-২’ ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’, ‘পল্লি জনপদ (উন্নত আবাসন) সৃজন’, ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অফ দি পুওরেস্ট (EEP)’, ‘মিল্কভিটার কার্যক্রম সম্প্রসারন’, বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী’ প্রতিষ্ঠাকরন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামারের সংখ্যা ১৮.৭২ লক্ষ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭৩ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেচ কার্যক্রমের আওতায় সদস্যদের মাঝে ১৮,৪৬০টি গভীর নলকূপ, ৪৪,৫২৩টি অগভীর নলকূপ, ১৯,৪০৫টি শক্তিচালিত পাম্প এবং ২,৭৩,০০০টি হস্তচালিত পাম্প বিতরন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (BARD) ৮৮টি প্রশিক্ষন, অবহিতকরন এবং কর্মশালা সংগঠনের মাধ্যমে ৩,৬৫১ জন অংশগ্রহনকারীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। চর জীবিকায়ন কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রাম,জামালপুর, গাইবান্ধা,বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ২৮টি উপজেলার ২.৫০লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।
প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস, জনপ্রশাসন ও কর্মসংস্থানঃ
‘ডাক ও টেলিটেলি যোগাযোগ মন্ত্রনালয়’ এবং ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’ কে একীভূত করে ‘ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়’ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ‘যোগাযোগ মন্ত্রনালয়’ এর নাম পরিবর্তন করে ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়’ এবং এর আওতাধীন সড়ক বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে ৯ জন বরেন্য ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবং ২০১৫ সালে ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে স্বাধীনতা পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল মন্ত্রনালয়/বিভাগ এবং দপ্তর/সংস্থা সমূহে সিটিজেন চার্টার প্রণয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতানিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে Grievance Redress System (GRS) চালু করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ২০১২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৫৯টি মন্ত্রনালয়/বিভাগ ওচিহ্নিত সংস্থায় নৈতিকতা কমিটি গঠন এবং কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা ও পরিবীক্ষণ কাঠামো করা হয়েছে।
বর্তমান মহাজোট সরকারের সময়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্য সরকারি কর্মচারী আইন এবং পদায়ন/বদলি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া কর্মকৃতিভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে এবং সকল ক্যাডার কর্মকর্তার ডাটাবেইজপ্রস্তুত, পদোন্নতি নীতিমালা সংশোধন ও যুগোপযোগীকরন করা হয়েছে। সরকারি যানবাহন (ব্যবহার নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৪, বাংলাদেশ সিভিল (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪ এবং জনপ্রশাসন পদক প্রদান নীতিমালা ২০১৪ প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রনালয়,বিভাগ ও দপ্তরের ১,১০,৫৮৫ টি পদ সৃজন, ৫৭,৫৩২টি পদ সংরক্ষণ, ১১,৩৬৫টি পদ স্থায়ীকরন করা হয়েছে। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে ৮,৩১২ জনকে নিয়োগ প্রদান, ২,১৫৮ জন নিয়োগের সুপারিশ এবং ৩৯৮৩জনের নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে। এ সময় ৬১৯ জন মৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিবার এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম ২ জন কর্মচারীকে মোট ৩০কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। NationalInitiative,Accordএবং ALLIANCE এর মাধ্যমে সকল গার্মেন্টস কারখানার Structural Integrity, Electrical & Fire Safety এর আওতায় নভেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত মোট ৩৬৬০টি কারখানা Assessmentকরাহয়েছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। অবৈধ ও অনিয়মিত অভিবাসন রোধকল্পে বিদ্যমান টাস্কফোর্স কে আরও বেগবান করার ফলে বিগত বছরে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।সিঙ্গাপুরের বিল্ডিং কনস্ট্রাকশানসেক্টরে নিরাপদ ও দক্ষ কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো Sending Organization হিসেবে ১৪টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।জাপানেTechnical Intern প্রেরণের বিষয়ে International Manpower Development Organization, Japan এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে MoUস্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সাথে এ সম্পর্কিত আর ৪টি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে।“বিভিন্ন জেলায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২৪টি জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৫শ ১৩ জন বিদেশগামী কর্মীকে ‘অভিবাসন ঋণ’ প্রদান করেছে। তা ছাড়া বিদেশ ফেরত প্রায় ১৫০ জন কর্মীকে পুনর্বাসন ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
আইনঃ
আদালতে এখন ভয়েসরেকর্ডারের মাধ্যমে সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে উচ্চ ও নিম্ন আদালতের দৈনন্দিন কার্য তালিকা ও মামলার সর্বশেষ তথ্য, পরবর্তী ধার্য তারিখসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। ২০১৪-১৫ সময়কালে ৪৮টি আইন,১৫২টি চুক্তি এবং ৬৫১টি সংবিধিবদ্ধপ্রজ্ঞাপণ প্রণয়নের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইন ও বিধিমালার নির্ভরযোগ্য অনুবাদ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ৭টি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে এবং ১০টি মামলা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।
পররাষ্ট্রঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী ফরেন পলিসি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ চিন্তাবিদদের একজন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জলাবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলা ও বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখায় তাঁকে ‘ডিসিশানমেকার্স’ ক্যাটাগরিতে শীর্ষ ১৩ জন চিন্তাবিদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণWomen in Parliament(WIP) Global Forum Award 2015 পুরষ্কারেভূষিত হয়। ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর ‘শান্তি বৃক্ষ’ (Tree of Peace)পুরস্কার লাভ করেন। জাতিসংঘেরMillennium Development Goals (MDGs) অর্জনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে Commonwealth Parliamentary Association (CPA) এর নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন, Inter-Parliamentary Union (IPU) এর প্রেসিডেন্ট, Comittee on the Elimination of Discrimination Against Woman (CEDAW) এর সদস্য, International Mobile Satellite Organizatio(IMSO) এর মহাপরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্ভাবিত হন। একই বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, UNICEF Executive Board, International Labour Organization (ILO) এর গভর্নিং বডি এবং ITU Council এর সদস্য নির্বাচিত হয়। ২০১৫ এ UNESCO বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে UNESCO Category II স্ট্যাতাস প্রদান করে এবং জাতিসংঘ সাধার পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০১৪ সালে ঢাকায় BIMSTEC এর স্থায়ী সচিবালয় স্থাপিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মধ্যে ২২টি উল্লেখযোগ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পরিবেশ ও বনঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের স্বীকৃতিস্বরুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত Champions of The Earth পুরষ্কারে ভূষিত হন। সুন্দরবন এনভায়রনমেন্টাল এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (SELS) প্রজেক্টের মাধ্যমে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়বর্ধক কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরার ফলে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে। পরিবেশ দূষণকারী ৪০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা সহ দেশের উপকূলীয় জেলাসমূহে প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর এলাকায় বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। ৫ লক্ষ পরিবারকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ৭২ শতাংশ শিল্প কারখানায় ইটিপি স্থাপন সহ ৮ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন এবং ১৫ লক্ষ উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে।
তথ্যঃ
অধিকতর সেবা এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কার্যক্রম সম্পাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের জন্য ১৬ তলা বিশিষ্ট তথ্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারী ভবনসমূহ নির্মাণ কার্যক্রম তরান্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য বিটিভি সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তথ্য কমিশন দুবছরে ৮৮৭৮ জন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সাংবাদিক, সাব এডিটর, সাব ইন্সপেক্টর ও শিক্ষককে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং ৫৮৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫৫৭টি নিষ্পত্তি ক্রএছে। অবশিষ্ট ৩০টি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়াধীন্ন রয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (RAJUK) আবাসন সমস্যার সমাধানে উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব), পূর্বাচল নতুন শহর ও ঝিলমিল আবাসিক শহরে মধ্যবিত্তের জন্য প্রায় ৯০ হাজার এপার্টমেন্ট নির্মাণ করছে। এ ছাড়া জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার নিরসন এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে বিক্রয়ের জন্য ৮৮৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। রাজধানীর কুড়াইল এলাকায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে প্রায় ৫০০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে পূর্বাচলে দেশের সর্বোচ্চ ১৩০ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থল সীমানা সংক্রান্ত Land Boundary Agreement 1974 (মুজিব ইন্দিরা চুক্তি) অনুসমর্থন দলিল বিনময়ের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে। ১ আগষ্ট ২০১৫ কে Appointed day হিসেবে নির্ধারণপূর্বক উভয় দেশের মধ্যে ভূমি বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে অপদখলীয় ভূমিসহ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত সকল বাংলাদেশী ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও কঠোর পরিশ্রমে দীর্ঘদিনের সমস্যা নিরসন হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর আধুনিকায়ন ও সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৫২৭টি বর্ডার অপারেশন পোষ্ট (বিওপি) এর অতিরিক্ত ৮০টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি নাগরিকদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) এবং প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা (MRV) প্রদান করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনঃ
৪ হাজার ৩শ ২ লক্ষ টাকা ব্যায়ে চট্টগ্রামস্থ হোটেল সৈকতের জমিতে ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন পর্যটন মোটেল নির্মাণ সমাপ্তির পথে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২, অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল, ভি ভি আইপি কমপ্লেক্স, কন্ট্রোল টাওয়ার ভবন ও পাওয়ার হাউজ ফায়ার ডিটেকশন ও এলার্ম সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড এর লাভের পরিমাণ ২৩৩.০৬ কোটি টাকা (অনিরীক্ষিত)।
বস্ত্র ও পাটঃ
বস্ত্র ও পাট খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা নিরসনের জন্য পাট আইন ২০১৫, বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান আইন ২০১৫ ও বস্ত্রনীতি ২০১৫ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ বান্ধব পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০ এর আওতায় ধান,চাল,গম,ভুট্টা, সার ও চিনি মোড়কীকরণে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূল্ক করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষাঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা চেতনায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিএমএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ, ভাটিয়ারী, চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ত হয়েছে। বিমান বাহিনী্ ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণ যশোর শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। Upgradation of Agro-Metrological Services শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৭টি কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। Improvement of Digital Mapping, System of Survey of Bangladesh (Revised) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও মৌলভীবাজারে ৬টি Permanent GNSS/GPS Station, Digital Mapping Unit (DMU) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সমগ্র দেশের Aerial Photography সম্পন্নকরণ সহ আন্তর্জাতিক সীমান্ত উপকূল ও সুন্দরবন এলাকার জন্য Sattelite Image ক্রয় করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কঃ
সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৮০০০ টাকায় এবং ভাতাভোগীদের সংখ্যা ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে এবং ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মধ্যে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০০০০ টাকা এবং বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ১৫০০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সর্বনিম্ন ১৮০০০ টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ ৪৮০০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত ভাতা প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভূমিহীন ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পটিতে ২৯৭১টি বাসস্থান নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৪৩টি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সকল উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৮১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৫৯টি স্মৃতিস্তভের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
ধর্মঃ
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় দুই বছরে ১,৫০০০০টি শিশুকে প্রাক প্রাথমিক ও নৈতিকতা শিক্ষা, ১০,২৯০০০ জন কিশোর কিশোরীকে সহজ কুরআন ও নৈতিকতা শিক্ষা এবং ৩৮,৪০০ জন নিরক্ষর বয়স্ক ব্যক্তিকে অক্ষরজ্ঞানদানসহ নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং দুঃস্থ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মোট ৪২,৯৮,৮৬০০০ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেমে সকল হজযাত্রীর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস এর মাধ্যমে হজ পূর্ব ৬টি নোটিফিকেশন প্রেরণ এবং মোবাইলের TVR সিস্টেমের মাধ্যমে হজ বুলেটিন ও তথ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
সংস্কৃতিঃ
জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৫ জন সুধীকে একুশে পদক ২০১৫ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৪ এ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৫ এ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৫-১৭ মেয়াদে সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগার অনুদান খাতে ১ হাজার ২৫টি পাঠাগারে ২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এছাড়া চারুশিল্প, থিয়েটার ইত্যাদি খাত থেকে ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশের ১,১৭৪টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অনুদান প্রদান করা হয়।
পানি সম্পদঃ
গত ২ বছরে ১৯২.৪২ কিলোমিটার নদী খনন/ড্রেজিং সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাপিটাল (পাইলট) ড্রেজিং অফ রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীতে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় পরীক্ষামূলক ড্রেজিং সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রাপ্ত ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালস দ্বারা সিরাজগঞ্জ শহর সংলগ্ন নদী তীরবর্তী অংশে চারটি ক্রসবার নির্মাণ করা হয়। এতে প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার ভূমি স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়। উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে উঠা চরে সমাপ্তকৃত চর ডেভেলপমেন্ট ও সেটেলমেন্ট প্রকল্পসমূহের আওতায় ১৭,৫৩৩ ভূমিহীন পরিবারকে ১৪,৭৯২ হেক্টর জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়াঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও খেলাধূলার প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগের ফলে ক্রিকেট আজ বাংলাদেশকে বিশ্বে পরিচিত করে তুলেছে। ওয়ার্ল্ড টি টুয়েন্টি বাংলাদেশ ২০১৪ ও এশিয়া কাপ ক্রিকেট ২০১৪ এর সফল আয়োজন করে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনুর্ধ্ব ১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অর্জন করে এবং বিশ্ব হকি লীগের প্রথম পর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। দেশের দরিদ্রতম ১৭টি জেলার ১৭টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং ১৪,৭১৮ জনকে প্রশিক্ষণ শেষে অস্থায়ী কর্মসংস্থানে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের দরিদ্রতম ২০টি উপজেলায় এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদর্শীতা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার দ্বারপ্রান্তে। ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক দুই মেয়াদে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পরিচিতি পাবে- এলক্ষ্যে মহাজোট সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।
Subscribe to:
Posts (Atom)